ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লন্ডনে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

২০২৫ মে ২৪ ১২:৪৭:৩৯
লন্ডনে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

ডুয়া ডেস্ক: লন্ডনে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ দুই সদস্যের মালিকানাধীন প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)। এই অর্থমূল্য প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের সমান।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এর ২৩ মে’র প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পায়। আদালতের নির্দেশে এখন আহমেদ শায়ান রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান ওই সম্পত্তিগুলো বিক্রি করতে পারবেন না। এসব সম্পদের মধ্যে অন্যতম হলো লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

এই দুই ব্যক্তি হলেন বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক ও শেখ হাসিনার সাবেক শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশত্যাগের সময় সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন এবং বর্তমানে তিনি দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আছেন।

দ্য গার্ডিয়ান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এর যৌথ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ রয়েছে। জব্দকৃত নয়টি সম্পত্তির মধ্যে কিছু ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান এবং জার্সির মতো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল। এসব সম্পদের মূল্য একেকটি ১.২ মিলিয়ন থেকে ৩৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত।

এনসিএ জানায়, এই তদন্ত এখনো চলমান এবং আরও সম্পত্তি জব্দের সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, জব্দকৃত সম্পদের মধ্যে লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে একটি বাড়িও রয়েছে যেখানে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। এই বাড়িটির মূল্য প্রায় ৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ড। ফিনান্সিয়াল টাইমসের মতে এই বাড়ির সাথে টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের সম্পর্কও রয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তদন্তে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইতিমধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে’র নীতিনির্ধারক ডানকান হেমস বলেন, "যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন দ্রুত সব সন্দেহভাজন সম্পদ জব্দ করে আমরা সে আহ্বান জানাই।"

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন জানান, সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা কমিশনের অর্থ আত্মসাত তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত।

শায়ান ও শাহরিয়ার রহমানের পক্ষে এক মুখপাত্র বলেন, তাদের মক্কেলরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছেন এবং যুক্তরাজ্যের তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। তারা আরও বলেন, "বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।"

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তার সরকার পতনের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন।

বর্তমানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার শুরু করেছেন। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার আমলে এসব প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠদের অর্থপাচারের অভিযোগে অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চলতি মাসে অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে দলটির অনেক নেতাকর্মী এই অভিযানে রাজনৈতিক প্রতিশোধের অভিযোগ তুলেছেন।

এদিকে টিউলিপ সিদ্দিক বারবার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছেন।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে