ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ মে ২১ ১৪:৪৭:২১
ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি

ডুয়া নিউজ: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-১৭১) স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি জানায়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি, সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ ছিল। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টি সিডিবিএল ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ম

২০১৮-১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, ডিএসইর ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে অর্থের ঘাটতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডে প্রায় ১৩ কোটি টাকার ঘাটতি পাওয়া যায়।

পরবর্তীকালে ২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ও অন্যান্য কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠে আসে। এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বিএসইসির আইনি সিদ্ধান্ত

কমিশন জানায়, প্রতিষ্ঠানটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুলস ৬(১), ৬(২), ৭(৩); স্টক-ডিলার ও ব্রোকার বিধিমালা ২০০০ এর বিধি ১১ ও দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি ১; ডিপজিটরি প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ৩৪(১) ও (২) লঙ্ঘন করেছে। তাই প্রতিষ্ঠানের স্টক ব্রোকার ও ডিলার সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বাতিল হওয়া সনদ দুটি হলো: নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০৯/৩৪৭: ২১.০৬.২০০৯ এবং নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০২/৬৪: ০৫.০৫.২০০২। ডিএসইকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

মালিকানা পরিবর্তন ও সাদ মুসা গ্রুপ

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ব্রোকারেজ হাউজটির ১০০% মালিকানা অধিগ্রহণ করে সাদ মুসা গ্রুপ। তখন প্রতিষ্ঠানটি আবার চালু করতে চাইলেও, শর্ত হিসেবে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ঘাটতি পূরণ, সুদ আদায়, এবং শেয়ার হস্তান্তর সঠিকভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। এ সময় তদন্তে আরও বড় অঙ্কের ঘাটতির তথ্য উঠে আসে—১০৮টি ব্রোকারেজ হাউজের মিলিত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি টাকা।

সাদ মুসা গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা

সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিংয়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালত চেক প্রত্যাখ্যানের ৫টি মামলায় তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। মামলাগুলোর মোট দাবি ছিল ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এছাড়া, ২০২৪ সালের মে মাসে করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে মুহম্মদ মহসিনসহ আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়।

বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিএসইসির এ ধরনের পদক্ষেপকে বাজার বিশ্লেষকরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, নিয়মভঙ্গকারী ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থান ভবিষ্যতে বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ডিসেম্বরেই

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ডিসেম্বরেই

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ‘রোজার... বিস্তারিত