ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
যাদের সঙ্গে কোরবানি দিলে কবুল হবে না– কারণগুলো কী?

ডুয়া ডেস্ক: নিশ্চয়ই কোরবানি আল্লাহর এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। যা সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য পালন করা ওয়াজিব। ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছেন আর এই উম্মতের সামর্থ্যবানদের ওপরও তা ফরজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়—সবার কোরবানি আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রশ্ন হলো কাদের কোরবানি আল্লাহ গ্রহণ করবেন না? আর কেনই বা তা অগ্রহণযোগ্য হবে?
এর পেছনে রয়েছে কিছু বিশেষ কারণ—
আল্লাহ তাআলা কোরবানির বিধান ও যা নির্দেশ দিয়েছেন তা কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এভাবে ওঠে এসেছে-
وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ
‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৪)
فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ
‘আপনি আপনার রবের জন্য নামাজ আদায় করুন এবং কোরবানি করুন’। (সুরা কাউসার: আয়াত ২)
যাদের কোরবানি কবুল হবে না-
কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহর জন্য পরিশুদ্ধ ও একনিষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ সংশয়ের স্থান নেই। কোনো রকম সন্দেহ-সংশয় থাকলে কোরবানি হবে না। কোরবানি দেওয়া সত্ত্বেও যাদের কোরবানি আদায় হবে না, তারা হলো-
১. নিয়তে বিশুদ্ধতা না থাকলে
কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য একনিষ্ঠতা তথা নিয়ত বিশুদ্ধতা থাকা জরুরি। কোরবানিতে কাউকে শরিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালোভাবে জেনে-বুঝে অংশীদার নির্বাচন করা। কারণ কোনো শরিকের নিয়ত গলদ হলে কারও কোরবানিই (অন্য শরিকদের কোরবানিও) শুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহর কাছে কোরবানি রক্ত, মাংস ও হাড় কিছুই পৌঁছায় না বরং পৌঁছে মানুষের নিয়ত তথা তাকওয়া। এ বিষয়টি আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-
لَن يَنَالَ اللهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ : 'আল্লাহর কাছে কখনোও ওগোলোর (কোরবানির পশুর) গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের (মানুষের অন্তরের) তাকওয়া (সংযমশীলতা); এভাবে তিনি ওগুলোকে (কোরবানির পশুগুলোকে) তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। এই জন্য যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। আর তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মশীলদের।' (সুরা হজ: আয়াত ৩৭)
২. কোরবানির পশুর প্রদর্শনী করলে
কোরবানি হবে শুধু আল্লাহর জন্য। লোক দেখানোর জন্য কিংবা সুনাম-সুখ্যাতির জন্য নয়। মানুষকে দেখানোর জন্য বাজারের বড় বড়, সুন্দর ও দামি পশুই জবাই করলেই কোরবানি হবে না। বরং তাতে ইখলাস থাকতে হবে। তবেই কোরবানি কবুল হবে। কোরবানির পশু প্রদর্শনীর ইচ্ছা থাকলে এ কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কার কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে তা-ও ওঠে এসেছে কোরআনের বর্ণনায়-
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ তো মুত্তাকি (পরহেজগার ও সংযমীদের) কোরবানিই কবুল করে থাকেন।' (সুরা মায়েদা: আয়াত ২৭)
৩. কোরআন-সুন্নাহর বিধানের লঙ্ঘন হলে
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধি-বিধান অনুসরণ করা ছাড়া কোনোভাবেই কোরবানি কবুল হবে না। বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَّلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدا
অর্থ : যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে; সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (সুরা কাহফ : আয়াত ১০)
সুতরাং যারা কোরবানি করবেন, তাদের কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার প্রতি লক্ষ্য রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা শুধু বছরজুড়ে এ পশু জবাই করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি দেয়; তাদের কোরবানিও গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪. ভাগ-বণ্টনে গড়মিল হলে
কোরবানির পশুতে প্রত্যেকের অংশ সমান হতে হবে। কারও অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারও দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)
উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)। উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। (মুআত্তা মালেক: ৭৫৪)
৫. গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে
যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্য ছাড়া কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কোরবানিও কবুল হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাজিখান ৩/৩৪৯)
৬. অবৈধ টাকায় কোরবানি করলে
হারাম টাকা দিয়ে কেউ কোরবানি করলে তার কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি শুধু পবিত্রতাই গ্রহণ করেন...।’ (তিরমিজি: ২৯৮৯)
তাছাড়া কোরআনুল কারিমে হালাল সম্পদ থেকে ব্যয় করার নির্দেশ এসেছে ভাবে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا کَسَبۡتُمۡ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে।...’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৬৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে একনিষ্ঠ নিয়তের সঙ্গে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের উদ্দেশ্যে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১.৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা
- গভীর রাতে ঢাবি শিবির সভাপতির ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়
- বনানীতে ঢাবির সাবেক ছাত্রীর ম’রদেহ উদ্ধার
- লাইভে এসে হিরো আলমের আ-ত্ম-হ-ত্যা
- শিক্ষা ক্যাডারে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস সার্কুলার প্রকাশে পিএসসির চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি
- ড. ইউনূসকে ‘আক্রমণ’!
- শেয়ারবাজার ধসের দায় চাপছে বিএসইসি নেতৃত্বের ওপর
- ফাঁস হলো হাসনাত-সার্জিসকে হ-ত্যার ভ'য়ঙ্কর পরিকল্পনা
- মৌসুমী-হাসান জাহাঙ্গীরের বিয়ে: ওমর সানীর ‘জুতাপেটা’র হুমকি
- ঘুরে দাঁড়ানোর পথে দেশের শেয়ারবাজার: দৃশ্যমান হচ্ছে ইতিবাচক পদক্ষেপ
- ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি!
- ছাত্রদল সভাপতির পদ হারিয়েছেন রাকিব! যা জানা গেল
- মূলধন বাড়াতে রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত
- ইপিএস প্রকাশ করেছে তালিকাভুক্ত ১৪ কোম্পানি
- সাবেক উপদেষ্টা গ্রেপ্তার:চাঞ্চল্যকর তথ্য