ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজার বাঁচাতে জরুরি প্রণোদনার দাবি ব্রোকারদের

২০২৫ মে ১৯ ০৭:২৩:০১
শেয়ারবাজার বাঁচাতে জরুরি প্রণোদনার দাবি ব্রোকারদের

ডুয়া নিউজ: শেয়ারবাজারের দীর্ঘস্থায়ী মন্দা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা কাটাতে তাৎক্ষণিক প্রণোদনার দাবি তুলেছেন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর নেতারা। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় তারা বলেন, কাগুজে সংস্কার নয়, বরং সাহসী ও দৃশ্যমান পদক্ষেপই বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর হতে পারে।

রোববার (১৮ মে) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল)-এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সভা এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বাজারের স্থবিরতা ও ধসের প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রতীকী কর্মসূচি পালন করছেন। আন্দোলনকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগও দাবি করেছেন।

সভায় ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বাজার সংকটের বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাজারে কাঠামোগত দুর্বলতা, যেমন: মূলধন ও অর্থবাজারের দুর্বল সমন্বয়, আইপিও প্রক্রিয়ার ধীর গতি, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থার অদক্ষতা, আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে অস্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ লেনদেন ও দুর্বল নজরদারি—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা চূর্ণ হয়েছে।

তিনি সংকট মোকাবেলায় একটি স্বল্পমেয়াদি ত্রাণ ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের সমন্বয়ে বিস্তৃত প্যাকেজ প্রস্তাব তুলে ধরেন।

তাৎক্ষণিক প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্ষিক বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি সম্পূর্ণ মওকুফ, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের জন্য মূলধন লাভ কর অব্যাহতি, ব্রোকারেজ কমিশন হার ০.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৩৫ শতাংশ করা, ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয় করমুক্ত ঘোষণা এবং উৎসে কর্তনকৃত করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব।

এছাড়া তিনি নেতিবাচক ইক্যুইটির বোঝা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা, প্রতি ১ লাখ টাকায় ট্রেডে অগ্রিম আয়কর ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা নির্ধারণ, এবং ব্রোকারদের একীভূত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেন; যেখানে বাকি ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে সংরক্ষিত থাকবে।

তিনি আরও প্রস্তাব করেন, নিয়ন্ত্রক ও ব্রোকারদের মধ্যে মাসিক সমন্বয় সভার আয়োজন, তালিকাভুক্ত ও অনালিখিত কোম্পানির কর ব্যবধান কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, ৫০০ কোটি টাকার বেশি দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য মূলধন বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা এবং সম্পদ-সমর্থিত কর্পোরেট বন্ডের রিটার্নকে করমুক্ত রাখা।

ডিএসই চেয়ারম্যান আগামী দুই বছরের মধ্যে আইপিও ও বন্ড ইস্যু প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি শক্তিশালী দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি এবং লাভজনক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। সব শেয়ারবাজার-সম্পর্কিত কমিটিতে স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির দাবিও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী সভায় অংশগ্রহণকারীদের আশ্বস্ত করেন যে, সরকার সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিলেও বাজারে তার প্রতিফলন হতে সময় লাগবে। বিএসইসি ইতোমধ্যে পাবলিক ইস্যু নিয়মনীতিতে সংস্কার এবং ভালো পারফর্মিং কোম্পানিগুলোর তালিকা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে।

ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, কেবল খুচরা বিনিয়োগকারীরাই নয়, ব্রোকার হাউসগুলোও চরম আর্থিক চাপে রয়েছে। তিনি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ব্রোকারদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর বাতিল, বিও হিসাব সংক্রান্ত চার্জ কমানো এবং বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানান।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে