ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২

ইতিহাসে খালেদা জিয়ার ১০টি বিরল রেকর্ড

২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ১৪:৩০:১৭

ইতিহাসে খালেদা জিয়ার ১০টি বিরল রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ছিলেন এক অদ্বিতীয় এবং প্রভাবশালী নেত্রী। চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ক্ষমতার ওঠাপড়া, কারাবাস এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সবই দেখেছেন। নির্বাচনের মাঠে জনতার সমর্থনে তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন নিজের শক্ত অবস্থান। সদ্য প্রয়াত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের রাজনীতিতে বিরল কিছু রেকর্ড ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত রেখে গেছেন, যা তাকে সমসাময়িক সব রাজনীতিকের চেয়ে আলাদা উচ্চতায় স্থাপন করেছে।

নির্বাচনী সাফল্য, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নীতি নির্ধারণ সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

১. কখনো নির্বাচনে পরাজিত হননি

খালেদা জিয়ার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড হলো তিনি কোনো নির্বাচনে হারেননি। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ) তিনি মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সব আসনেই বিজয়ী হন। এই শতভাগ নির্বাচনী সাফল্য বাংলাদেশ রাজনীতিতে বিরল।

২. পাঁচ আসনে জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’

এক সময় দেশের নির্বাচনি আইনে এক প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। এই সুযোগে খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন) ও ২০০১ সালে প্রতিটি নির্বাচনে পাঁচটি আসনে দাঁড়িয়ে সবকটিতেই জয়ী হন। ২০০৮ সালে আইন পরিবর্তনের পর তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতেই নির্বাচিত হন।

৩. ছয় ভিন্ন জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত

খালেদা জিয়া দেশের ছয়টি ভিন্ন জেলা বগুড়া, ফেনী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও খুলনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়া তাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে।

৪. ফার্স্ট লেডি থেকে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র নারী, যিনি ‘ফার্স্ট লেডি’ থেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। গৃহিণী থেকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এই পদে পৌঁছানো রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

৫. সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন

১৯৭৫ সালের পর রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা চালু ছিল। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া দ্বাদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।

৬. নারী শিক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ

তার সরকারের মাধ্যমে মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা এবং উপবৃত্তি চালু করা হয়। নারীদের শিক্ষা, কর্মজীবন ও সামাজিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও এই উদ্যোগের মাধ্যমে আসে।

৭. মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা

২০০১ সালে প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়, যা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।

৮. পলিথিন নিষিদ্ধের সাহসী উদ্যোগ

পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ কমানোর জন্য ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়।

৯. সার্কের প্রথম নারী চেয়ারপার্সন

১৯৯২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক সম্মেলনে প্রথমবারের মতো নারী চেয়ারপার্সন হিসেবে নির্বাচিত হন। দক্ষিণ এশিয়ার মতো রক্ষণশীল অঞ্চলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

১০. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন, নির্বাচনি সাফল্য এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার তাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্থায়ী অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর দীর্ঘ ও ঘটনা সমৃদ্ধ রাজনৈতিক অধ্যায় দেশের ইতিহাসে বহুদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত