ঢাকা, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

‘শাপলা চত্বর হ'ত্যাকাণ্ডের’ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরলেন শফিকুল আলম

২০২৫ ডিসেম্বর ০৮ ১৫:১৬:১৫

‘শাপলা চত্বর হ'ত্যাকাণ্ডের’ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরলেন শফিকুল আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বারবার যুবলীগ-ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো, আক্রমণ এবং হত্যার নীতি প্রয়োগ করেছে। এই একই কৌশল চলতি বছর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো জাতির প্রতিরোধের মুখে ঠেকেছে।

শফিকুল আলম সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দীর্ঘ পোস্টে লিখেন, ‘শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড’ বলতে সাধারণত মতিঝিলের শাপলা স্কয়ার এলাকাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে বোঝানো হয়। ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে প্রথম দফায় হতাহতের খবর পাওয়া শুরু হয়। একই সময় পল্টন, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল মোড় এবং মতিঝিলের অন্যান্য এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল।

২০১৩ সালে এএফপি’র ঢাকা অফিস ছিল তৎকালীন শিল্প ব্যাংক (বর্তমান বিডিবিএল ভবন), দিলকুশা মতিঝিলে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, শাপলা চত্বরে এবং মতিঝিলের প্রধান সড়কজুড়ে হাজার হাজার হেফাজত সমর্থকের ভিড়। রাত যত গভীর হচ্ছিল, এক-দুই লাশ শাপলা চত্বরে আনা হলো। নিহতদের পরিচয় বা মৃত্যুর কারণ তখন জানা যায়নি।

রাত আটটার দিকে বড় তথ্য আসে শাহিদবাগ–মালিবাগের বারাকা জেনারেল হাসপাতালে হেফাজত সমর্থকের ছয়টি লাশ নেওয়া হয়েছে, প্রতিটি লাশের মাথায় গুলি করা। শফিকুল আলমের সহকর্মী কামরুল অন্তত এক ডজন ফোন করে তথ্য যাচাই করেন। হাসপাতালের ম্যানেজার মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, খবরটি রেড-অ্যালার্ট হেডলাইন হিসেবে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, তবে ব্রিটিশ সম্পাদক আরও একটি উৎস থেকে নিশ্চয়তা চাইতে জোর দেন। দ্বিতীয় উৎস নিশ্চিত হওয়ার পর দেখা যায়, মৃত্যুর সংখ্যা স্থানীয় কোনো পত্রিকা বা টিভি রিপোর্টকে ছাড়িয়ে যায়।

পরদিন কাকরাইলের ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে আরও লাশের তথ্য নিশ্চিত হয়। নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বড় হত্যাকাণ্ডের খবর আসে। ভোরে পুলিশ তাড়ানোর পর হেফাজতের একটি দল পরিবহন বন্ধ থাকায় হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। বিজিবি সদস্যরা তাদের ওপর গুলি চালায়, প্রায় ২০ জন নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি হাসপাতাল ঘুরে লাশগুলো খুঁজে দেখা হয়। পুলিশ ও বিজিবি কোনো তথ্য দেয়নি, তবে হাসপাতালের কর্মীরা মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

শফিকুল আলম লিখেছেন, ঢাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন যে পুলিশ কাউকে হত্যা করেছে। তারা আন্দোলন প্রতিরোধকে ‘দেশকে তালেবান রাষ্ট্র হওয়া থেকে রক্ষা করা’ হিসেবে প্রচার করতে লাগেন এবং দাবি করেন, নিহতের সংখ্যা খুব কম। তবে আমাদের হিসাব অনুযায়ী পুলিশ যখন ৭ জন বলছে, আমরা সংখ্যা ৪৯-এ পৌঁছেছি।

অধিকার সংগঠন পরে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬০ বলে অনুমান করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচও একই রকম সংখ্যা রিপোর্ট করে। পল্টন ও ঢাকার কেন্দ্রীয় এলাকায় অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে অস্ত্রধারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। শফিকুল আলম জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনতেন জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ও রিয়াজ মিল্কি। পরবর্তীতে তারেক মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করে, যা সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। পরে তাকে র‍্যাব ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা করে।

শেষে তিনি উল্লেখ করেন, এরপরের এগারো বছর ধরে আওয়ামী লীগ একই কৌশল প্রয়োগ করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো, আক্রমণ ও হত্যা। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে পুরো জাতির প্রতিরোধ তাদের কার্যক্রমকে থামিয়ে দিয়েছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত