ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

৮ কুকুরছানা হ’ত্যা: সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

২০২৫ ডিসেম্বর ০৩ ১০:২৭:১৯

৮ কুকুরছানা হ’ত্যা: সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এর ৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমানকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার পরপরই নিশি রহমানকে রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঈশ্বরদী সার্কেল-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার জানিয়েছেন, গতকাল রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে ঈশ্বরদী পৌর সদরে রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশে তার চারতলা বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন জানান, এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এ কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ফোন করেছিলেন। তিনি বলেন, “এ ঘটনা অমানবিক এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।” মহাপরিচালকও মামলার কার্যক্রমে নির্দেশনা দিয়েছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা নয়নকে গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিতভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা মঙ্গলবার বিকেলে বাসা খালি করে অন্যত্র চলে গেছেন। অভিযুক্ত নয়নের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

তবে নিশি রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “বাচ্চাগুলো আমাদের সিঁড়ির পাশে থাকতো এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সজিনার গাছের গোড়ায় রেখে এসেছি। কীভাবে পুকুরে পড়েছে, তা জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।”

উল্লেখ্য, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের এক কোণায় দীর্ঘদিন ধরে টম নামের একটি কুকুর থাকে। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে মা কুকুর ছানাগুলো খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। পরে উপজেলা পরিষদের কর্মীরা জানতে পারেন, নয়ন ও তার স্ত্রী রোববার রাতের কোনো এক সময়ে কুকুরছানাগুলো বস্তায় ভরে উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেন। সোমবার সকালে মৃত ছানাগুলো উদ্ধার করা হয় এবং দুপুরে ইউএনও’র বাসভবনের পাশে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বললেন। পরে তার ছেলে জানিয়েছে, ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখেছিলাম। খুলে দেখে আটটি ছানার মরদেহ পাই। মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন।”

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত