ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

এবি ব্যাংক-কে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৫০০ কোটি টাকার জরুরী সহায়তা

২০২৫ নভেম্বর ২৫ ২১:৩০:০১

এবি ব্যাংক-কে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৫০০ কোটি টাকার জরুরী সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমানত তুলে নেওয়ার চাপ এবং বড় করপোরেট দেনা পরিশোধে চরম সংকটে পড়া তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংকের জন্য সর্বশেষ ‘উদ্ধার প্রচেষ্টা’ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জরুরি তারল্য সহায়তা দিয়েছে। নীরব এ সহায়তা অনুমোদন করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ১৬ নভেম্বর অনুমোদনের পর প্রমিসরি নোট জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে ব্যাংকের হিসাবের বিপরীতে ছাড় করা হয়। ৯০ দিনের জন্য দেওয়া এই ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়েছে ১১.৫০ শতাংশ।

নতুন এই সহায়তা যুক্ত হওয়ায় এবি ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মোট দেনার পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ব্যাংকটি তিন ধাপে মোট ৭৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা গেছে। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকটির মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাহকদের ব্যাপক উত্তোলনের কারণে এবি ব্যাংকের আমানতে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই সময়ে গ্রাহকরা ৮৪২ কোটি টাকা তুলে নেন, যার ফলে ব্যাংকটির ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্টে নেমে এসেছে মাত্র ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। টাকার এই ঘাটতির কারণে দেশের বিভিন্ন শাখা গ্রাহকদের উত্তোলন-চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান গভর্নরকে পাঠানো এক চিঠিতে বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, নগদ সংকটের ফলে আমানতকারী ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং শাখাগুলো এলোমেলো অবস্থার ঝুঁকিতে পড়েছে। এর আগেই, ৩ নভেম্বর গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে এবি ব্যাংক প্রথম দফায় ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছিল। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জরুরি সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং চেয়ারম্যান কায়সার এ চৌধুরী ও এমডি আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেন।

ব্যাংকের বোর্ড রেকর্ডে দেখা যায়, এই গভীর সংকটের কারণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আটকে আছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ২০২ কোটি টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৩৭৮ কোটি টাকা, আশা বাংলাদেশের ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা এবং আরও বহু বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থ। এমনকি ব্যাংকটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ৫২৮ কোটি টাকার একটি এলসি নিষ্পত্তি করতেও ব্যর্থ হয়েছে।

একসময় দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সুনাম অর্জন করা এবি ব্যাংক দীর্ঘ বছর ধরে স্পন্সর-পরিচালকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, দুর্নীতি এবং অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণের কারণে ক্রমশ আর্থিক বিপর্যয়ের দিকে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়েছে যে, ২০২৪ সালে ব্যাংকটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লোকসান দেখেছে—শেয়ারপ্রতি লোকসান ২১ টাকা ২৮ পয়সা এবং সমন্বিত বার্ষিক লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা।

এর ঠিক আগের বছর ২০২৩ সালে ব্যাংকটি ৯০ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৪৩ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ৮৪ শতাংশ। এর অর্ধেকেরও বেশি—৫৬ শতাংশ—শীর্ষ ২০ ঋণগ্রহীতার কাছে আটকে আছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত