ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

স্টেকহোল্ডারদের ক্ষোভে ফুঁসছে দেশের শেয়ারবাজার

২০২৫ নভেম্বর ২০ ০৭:২৬:৪৩

স্টেকহোল্ডারদের ক্ষোভে ফুঁসছে দেশের শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের এক বছরের দীর্ঘ সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্টেকহোল্ডারদের দেওয়া পরামর্শের সামান্য প্রতিফলন পাওয়া যায়নি—চূড়ান্ত বিধিমালা প্রকাশ হওয়ার পরই বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হয়েছে। নতুন মার্জিন বিধিমালা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অতিরিক্ত কঠোরতা সাধারণ বিনিয়োগকারী—বিশেষত মধ্যবিত্ত গৃহিণী, শিক্ষার্থী ও অবসরপ্রাপ্তদের লিভারেজ ব্যবহার করে বিনিয়োগ করার সুযোগ সংকুচিত করেছে।

বাজারে নতুন কোম্পানি আনার জন্য প্রস্তাবিত প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বিধিমালা নিয়েও অসন্তোষ চরমে। প্রকাশিত খসড়ার উপর আলোচনায় অংশ নেওয়া স্টেকহোল্ডাররা অভিযোগ করেছেন—শেষ মুহূর্তে ‘রাতারাতি’ পরিবর্তনে তাদের বেশিরভাগ পরামর্শই উপেক্ষিত হয়েছে।

রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ডিএসই পরিচালক রিচার্ড ডি'রোজারিও বলেন, সচল শেয়ারবাজারের জন্য বড় সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। স্টেকহোল্ডাররা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। জটিল নিয়মাবলী বাজারে চাহিদা–সরবরাহ উভয়ই বাধাগ্রস্ত করবে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, খসড়া আইপিও বিধিমালায় কোম্পানিগুলোকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে আইপিও তহবিল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে—যা অতীতে নমনীয় থাকলেও তালিকাভুক্তি বাড়াতে কার্যকর হয়নি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া—নতুন নিয়মগুলো অত্যন্ত জটিল। তাঁর দাবি, বাংলাদেশের উচিত ভিয়েতনামের মতো আঞ্চলিক দেশের কাছ থেকে শেখা, যারা গত এক দশকে তারল্যপূর্ণ শেয়ারবাজার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, “অর্থনীতির প্রকৃত চাহিদার সঙ্গে নিয়ম যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, আমরা বাজারকে আরেক দফা সংকটে ঠেলে দেবো। প্রতিটি বিধিমালার চূড়ান্তকরণ হতে হবে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে।”

ডি'রোজারিওর মন্তব্য—বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দুর্বল নিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি; বরং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই নিয়ন্ত্রকদের সঠিক পদক্ষেপ নিতে বাধা দিয়েছে। তিনি উদাহরণ দেন, ২০১০ সালের ধসের সময় ব্রোকারদের জোরপূর্বক বিক্রি বন্ধ রাখতে মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে মধ্যস্থতাকারী খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার নেগেটিভ ইকুইটি তৈরি হয়।

ডিবিএ নেতা মো. মনিরুজ্জামান ও মো. নাফিজ আল তারিক তাদের উপস্থাপনায় বলেন, নিয়ম কঠোর করে আইপিও বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে গিয়ে বাজারকে আরও স্থবির করে তোলা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ—আইপিও-পূর্ব শেয়ারহোল্ডারদের লক–ইন সময় ৫–৬ বছর পর্যন্ত বাড়ানো, অতিরিক্ত রক্ষণশীল মানদণ্ডে মূল্যায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনাস্থা খসড়া বিধিমালায় স্পষ্ট। এতে নতুন বিনিয়োগকারী তৈরি হবে না, মানসম্মত স্ক্রিপ্টের সরবরাহও বাড়বে না।

শিল্প প্রতিনিধিরা জানান, ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে আইপিওর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত আছে, কিন্তু বিনিয়োগবান্ধব নীতি না থাকায় তারা তালিকাভুক্ত হতে সাহস পাচ্ছে না। ডিএসই’র স্বতন্ত্র পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বাজার অসংখ্য কঠোর নিয়ন্ত্রণে ভারাক্রান্ত হলেও বাস্তবায়ন দুর্বল এবং তদারকি আরও দুর্বল।

গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাজারে দুই দফা উত্থান দেখা গেলেও কোনোটিই স্থায়ী হয়নি। প্রথম উত্থান আসে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর; দ্বিতীয় উত্থান জুন–সেপ্টেম্বরে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার কমার ফলে। কিন্তু যা ছিল স্বাভাবিক সংশোধনের সময়—তা ধসে পরিণত হয়। নতুন বিধিমালা নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীরা টানা বিক্রি শুরু করলে গত সপ্তাহেই আগের সব লাভ মুছে যায়।

বিএসইসি গত বছর সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে, যারা বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ছোট ফোকাস গ্রুপে পরামর্শ করেছিল। অনুসন্ধানে জানা যায়—সেসব সুপারিশের বেশিরভাগই উপেক্ষিত হয়েছে এবং চূড়ান্ত করার আগে বহু প্রস্তাব ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত