ঢাকা, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ইতালি যাওয়ার পথে গু’লিতে মাদারীপুরের তিন যুবক নি’হত

আসাদুজ্জামান
আসাদুজ্জামান

রিপোর্টার

২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৯:০৮:০০

ইতালি যাওয়ার পথে গু’লিতে মাদারীপুরের তিন যুবক নি’হত

লিবিয়ায় গুলিতে তিন বাংলাদেশি যুবকের প্রাণহানির ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে মাদারীপুর জুড়ে। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় দালালচক্রের নেয়ার পথে গুলিবর্ষণে নিহত হন ইমরান, মুন্না ও বায়েজিত। স্বজনরা দালালদের কঠোর বিচারের দাবি জানিয়ে কাঁদছেন, আর এলাকাজুড়ে চলছে গভীর শোকের আবহ।

স্বজনদের ভাষ্যমতে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের ইমরান খান ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন। ইতালি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসে স্থানীয় দালাল ও প্রতিবেশী শিপন খানের সঙ্গে ২২ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছানো তো দূরের কথা, লিবিয়ায় আটকে রেখে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। এরপর ১ নভেম্বর ইমরানসহ যাত্রীদের লিবিয়া থেকে নৌকায় তুলে দেওয়া হয় ইতালির উদ্দেশে। যাত্রাপথেই গুলিতে মারা যান তিনি। মঙ্গলবার পরিবারের কাছে আসে মৃত্যুসংবাদ।

একই ঘটনায় রাজৈর উপজেলার দুর্গাবর্দ্দী গ্রামের মুন্না তালুকদার এবং ঘোষলাকান্দি গ্রামের বায়েজিত শেখও মারা যান। গুলিতে প্রাণ হারানোর পর তাদের মরদেহ সাগরে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।

পরিবার-পরিজনরা শোকসংবরণ করতে না পেরে দালালদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই দালাল শিপনের পরিবারের লোকজন ঘরে তালা ঝুলিয়ে উধাও। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই লিবিয়ায় বসে তিনি এলাকার বহু যুবককে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দালালি চালিয়ে আসছেন। এর আগেও এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

ইমরানের বড়বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, দালাল শিপন আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। তার কঠোর বিচার চাই। সরকারের কাছেও দাবি করছি, অন্তত একবার যেন ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই। ইমরানের স্বজন সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, শিপনের ক্ষমতা অনেক। আগেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু টাকা দিয়ে বাঁচে যায়। কঠিন শাস্তি না হলে এই অপরাধ বন্ধ হবে না।

মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। ভাগিনার মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। দালালের শাস্তি চাই এবং মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

অন্যদিকে বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, "এত টাকা দিয়ে ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া অসম্ভব। দালাল স্বীকার করে না, পরে লিবিয়া থেকে জানা যায়। এখন ওরা কেউ নেই।"

দালাল শিপনের চাচি সেতারা বেগম বলেন, শিপন অনেককে নিয়েছে, কিন্তু কেউ গুলিতে মারা গেছে—এমন কথা আগে শুনিনি। শিপন লিবিয়ায় আছে, পরিবারের কেউই বাড়িতে নেই।

শেষ পর্যন্ত পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেএমএ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত