ঢাকা, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২

৭ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডুয়া নিউজ

২০২৫ নভেম্বর ১৫ ০০:০৬:১১

৭ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

দীর্ঘ সাত বছর পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই সফরে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবে, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে চাপ দেবেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের প্রধান লক্ষ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সৌদি আরবের এখনই রাজি হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ রিয়াদ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া আঞ্চলিক সংহতি সম্ভব নয় বলে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের আজিজ আলগাশিয়ান লিখেছেন, এই সফরের মূল লক্ষ্য তিনটি—সৌদি-মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উন্নীত করা, সুসংহত ও সহজতর করা।

২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি এজেন্টদের হাতে হত্যার পর সৃষ্ট উত্তেজনার পর এটাই যুবরাজের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। ট্রাম্পের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বহু পুরোনো, যা ২০১৭ সালে ট্রাম্পের রিয়াদ সফরে আরও দৃঢ় হয়। তিন দিনের এই সফর সোমবার শুরু হবে এবং মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে যুবরাজের বৈঠকের কথা রয়েছে। সফরকে ঘিরে ওয়াশিংটনে জ্বালানি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি বিনিয়োগ ফোরামও অনুষ্ঠিত হবে।

ট্রাম্প সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছেন যে সৌদি আরব ‘খুব শিগগিরই’ আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে। তবে হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রিয়াদ এখন কোনও ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচক দলের প্রধান মানাল রাদওয়ান মানামা ডায়ালগে বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া আঞ্চলিক সংহতি সম্ভব নয়, এবং এ বিষয়ে তাদের অবস্থান বহুবার জানানো হয়েছে।

যুবরাজ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবেন, বিশেষ করে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ ক্ষমতার চিপ সংগ্রহে তাদের আগ্রহ রয়েছে।

সৌদি আরব বর্তমানে তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটন ও বিনোদন খাতে বড় প্রকল্প গ্রহণ করছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে তেহরানসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালু রেখেছে। রাদওয়ান জানিয়েছেন, ইরান ইস্যুতে সৌদি আরব তার ‘সদিচ্ছা কেন্দ্রিক ভূমিকা’ অব্যাহত রাখবে, তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সরাসরি আলোচনাই পারমাণবিক সংকট সমাধানের পথ।

কিংস কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক আন্দ্রেয়াস ক্রিগের মতে, এই সফরের মূল প্রশ্ন হলো, যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারেন কি না, যা ইরানের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং সৌদির ভিশন ২০৩০-কে সুদৃঢ় করবে। এর বিনিময়ে ওয়াশিংটন সৌদির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সীমিত করা এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাস্তবসম্মত অগ্রগতি চাইবে।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত