ঢাকা, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

ধর্মীয় কার্ডের মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করতে চায় আ.লীগ 

২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৩:০৬:২৭

ধর্মীয় কার্ডের মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করতে চায় আ.লীগ 

ডুয়া নিউজ ডেস্ক :বিতর্কিত ও উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ইসকন বর্তমানে নতুন কৌশল গ্রহণ করে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তারা পূজা উদযাপন পরিষদ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং রামসেনা, শিবসেনাসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দখল করে নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে সহযোগিতা করছে ভারত থেকে পলাতক কিছু স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ নেতা, যারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইসকনের গোপন বৈঠকে যুক্ত হচ্ছেন।

চট্টগ্রামের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ড অংশ এখন এই সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু। দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত নেতারা নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কলকাতা ও ত্রিপুরায় অবস্থানরত কিছু প্রভাবশালী নেতা বৈঠকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে অন্তত ১৩টি সংগঠনের নামে এক হাজারেরও বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে স্থানীয়ভাবে ধর্মীয় উৎসবের আড়ালে তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসকনের সদস্যরা সাধারণ ভক্তের পোশাকে অংশগ্রহণ করছে যাতে সন্দেহ তৈরি না হয়।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়াটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। গত এক বছরে ইসকনের সদস্যরা ধর্মীয় পরিচয়ের আড়ালে নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাবও বৃদ্ধি করেছে।

ইসকনের এই নতুন কৌশল প্রথম নজরে আসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে, ফেব্রুয়ারির শিব চতুর্দশী মেলায়, যেখানে রামসেনাসহ অন্যান্য সংগঠনের ব্যানারে শতাধিক তরুণ অংশগ্রহণ করেছিল। পরবর্তী সময়ে জন্মাষ্টমীর র‌্যালিতে ‘চিন্ময়ের মুক্তি চাই’ লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করে ইসকনের প্রভাব স্পষ্ট হয়। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবের পর এই সংগঠনটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক মাসের মধ্যে অন্তত ১৬টি মহাসমাবেশ করেছে।

বর্তমানে ইসকন সরাসরি কার্যক্রম চালাচ্ছে না, বরং তাদের সদস্যদের বিভিন্ন নামসর্বস্ব সংগঠনে ছড়িয়ে দিয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে রামসেনা, হিন্দুস্তান পরিবার, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, হিন্দু ছাত্র পরিষদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, বিশ্ব সনাতন মোর্চা, সনাতনী জাগরণ জোট ইত্যাদি। বেশিরভাগ নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতারা, যারা ইসকনের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত।

চট্টগ্রামের জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, স্রাইন কমিটি এবং পূজা উদযাপন পরিষদের অধিকাংশ কমিটি এখন ইসকন-সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণে। গোয়েন্দারা জানান, এসব সংগঠনের নেতা নিয়মিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম সফর করে আরএসএস ও বিজেপির আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় এসব কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

স্থানীয় পুলিশ জানায়, যারা ধর্মীয় আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণে ইসকনের এই পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কর্মকাণ্ড জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা দিচ্ছে।

সূত্র:আমার দেশ।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত