ঢাকা, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের লোকসান ৪,৫০০ কোটি

২০২৫ নভেম্বর ০৮ ০০:২৭:৫৯

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের লোকসান ৪,৫০০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা শত শত কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করার পর তাদের মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা শেয়ারগুলোর ফেস ভ্যালুকে প্রতিনিধিত্ব করে।

তবে, বাজারের মূল্য অনুযায়ী এই লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২২ কোটি টাকা, কারণ শেয়ারগুলো দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ফেস ভ্যালু (১০ টাকা)-এর নিচে লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) মার্জার আদেশের পর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শেয়ারবাজার এই ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) স্থগিত করেছে।

ব্যাংকগুলো হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি তাদের কোনো আইনি দায়িত্ব নেই, তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা হলে তা আলাদা বিষয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো প্রায় ৫৮২ কোটি শেয়ার ইস্যু করেছিল, যার ফেস ভ্যালু ১০ টাকা করে মোট পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাধারণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডারদের হাতে রয়েছে ৭৬ শতাংশ বা ৪৪৩ কোটি শেয়ার। অর্থাৎ, এই বিনিয়োগকারীরা ফেস ভ্যালু অনুযায়ী ৪ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার শেয়ার হারাচ্ছেন, যার বাজার মূল্য ছিল ১ হাজার ২২ কোটি টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা এই ব্যাংকের ১১৩ কোটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ছিল ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা এবং বাজার মূল্য ২২০ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০০ কোটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১ হাজার কোটি টাকা এবং বাজার মূল্য ৩০১ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের ৯৭ কোটি শেয়ারের বাজার মূল্য ২৯৩ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৮৪ কোটি শেয়ারের বাজার মূল্য ১৪২ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ৪৭ কোটি শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ২৯৩ কোটি টাকা।

গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বলা হয়েছিল, "একটি গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কিন্তু সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যা বিনিয়োগকারীদের বাধাগ্রস্ত করবে"।

তবে, বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ঘোষণা করেন, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ইতোমধ্যে ৩৫০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা নেতিবাচক হওয়ায় শেয়ারহোল্ডাররা নতুন ব্যাংকে কোনো অংশ পাবেন না। এর মানে হলো, ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা সম্পদের চেয়ে তাদের ঋণ বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অনুশীলন মেনে গভর্নরের এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে তারা অভিযোগ করেন, বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকগুলোর ভালো আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করেছিলেন যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অডিটরদের যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর দায়ভার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এড়াতে পারবে না। তারা আরও বলেন, “বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে সরকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কিছু শেয়ার দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে”।

বাজার সংশ্লিষ্টরা এই প্রক্রিয়াকে 'মার্জার' বলতে আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি মার্জার নয়, বরং আমানতকারীদের জন্য করদাতার অর্থায়নে বেইল-আউট। তারা বলেন, আমানতকারীরা আইন অনুযায়ী ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী মিজানুর রহমান মনে করেন, এই পরিস্থিতির জন্য সরকারেরও কিছু দায় রয়েছে এবং সরকারের উচিত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "যদি বিনিয়োগকারীরা নতুন ব্যাংকে কোনো শেয়ার না পায়, তবে তা শেয়ারবাজারকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে"।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত