ঢাকা, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২

১ দিনে জমি দখল উদ্ধার! যদি নেন এই তিনটি পদক্ষেপ

২০২৫ অক্টোবর ২৯ ১৩:০৯:২৩

১ দিনে জমি দখল উদ্ধার! যদি নেন এই তিনটি পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেদখল হওয়া পৈতৃক বা ক্রয় করা সম্পত্তি ফিরে পাওয়া একসময় ছিল এক দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক প্রক্রিয়া। সেই হতাশার দিন এবার শেষ হতে চলেছে। সাম্প্রতিককালে কার্যকর হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং এর নতুন বিধিমালা পুরনো আদালতের প্রক্রিয়াগুলোর সঙ্গে মিশে গিয়ে জমি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটিকে করেছে অনেক বেশি কার্যকর ও দ্রুত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সংবাদ অনুযায়ী, প্রবাসে থাকা বা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সঠিক আইনি পথ অবলম্বন করে জমি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা এখন আর অসম্ভব নয়।

আজকের প্রতিবেদনে সেই তিনটি কার্যকর ধাপ সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ করলাম, যা অনুসরণ করলে দ্রুত জমি ফিরে পাওয়া সম্ভব।

প্রথম ধাপ:

নতুন ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর বিধিমালা ভুক্তভোগীকে প্রশাসনিক স্তরে জরুরি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ দিয়েছে। যদি কেউ জাল দলিল তৈরি করে বা প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল করে থাকে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় তা প্রমাণিত হয়, তখন আদালত সেই আদেশের কপি জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাতে পারে। ভুক্তভোগী এই সুযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অবৈধ দখল প্রতিরোধ এবং উচ্ছেদ সংক্রান্ত আদেশ চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিতে পারেন অর্থাৎ, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ থাকলে পুলিশের সহায়তায় দখল প্রত্যাহার বা পুনর্বহাল কার্যকর করা সম্ভব।

করণীয়: আপনার সকল মূল দলিল, পরিচয়পত্র এবং প্রমাণাদি নিয়ে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট) বরাবর আবেদন করুন এবং বিধিমালার আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

দ্বিতীয় ধাপ:

দ্রুত জমি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ধারা ১৪৫ এর অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত তড়িঘড়ি সম্পন্ন হয়, যেখানে মূল ফোকাস থাকে'বাস্তবে দখল কার আছে?' জমির কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতা কম থাকলেও বাস্তব দখলের প্রমাণের ভিত্তিতে নির্বাহী আদেশ দেওয়া যেতে পারে। এই মোকদ্দমায় ভূমি উপ-কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি দখলদার পক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে দখল হস্তান্তর না করে, তবে নির্বাহী আদেশ কার্যকর করা হয় এবং এই ক্ষেত্রে দ্রুত রায় পাওয়া সম্ভব।

করণীয়: দ্রুত আপনার নিকটস্থ থানা বা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে ভূমি উপ-কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে আবেদন করুন এবং ধারা ১৪৫ অনুযায়ী আদালতে মামলা জমা দিন। প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ সঙ্গে রাখুন।

তৃতীয় ধাপ:

যদি ধারা ১৪৫ এর রায় প্রত্যাশিত ফল না দেয় অথবা জমির মালিকানা বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী আইনি নিষ্পত্তি প্রয়োজন হয়, তখন ঘোষণামূলক মোকদ্দমা (Declaratory Suit) দায়ের করতে হবে। প্রচলিত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন (Specific Relief Act, 1877) এর ধারা ৪২ অনুসরণ করে দেওয়ানি আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়। আদালত যদি আপনার মালিকানা ঘোষণা করে রায় দেন, তবে সেই চূড়ান্ত রায়ই ভবিষ্যতে দখলদারকে উচ্ছেদ করতে পুলিশ-সহ নির্বাহী কার্যক্রমের ভিত্তি তৈরি করে।

করণীয়: আপনার সমস্ত জরুরি দলিল (মূল দলিল, রেজিস্ট্রেশন কপি, প্রমাণ, সাক্ষীর বিবৃতি ইত্যাদি) সংগ্রহ করে একজন অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর মাধ্যমে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করুন।

বাস্তব উদাহরণ ও পরামর্শ

উদাহরণস্বরূপ, কুমিল্লা থেকে একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ পেলেও দখলদার জমি ছাড়ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে, ভুক্তভোগী সেই নির্বাহী আদেশ কার্যকর করতে পুনরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাইতে পারেন। যদি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বাধা আসে, তবে দেওয়ানি আদালতের ঘোষণামূলক রায়ই জমির মালিকানার চূড়ান্ত ও টেকসই সমাধান দিতে সক্ষম।

জরুরি পরামর্শ:

সকল মূল দলিল, খতিয়ান, এবং অতীতের প্রশাসনিক আবেদনের প্রমাণপত্র যত্নসহকারে সংরক্ষণ করুন। প্রত্যেক ধাপে অবশ্যই অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর পরামর্শ নিন, যাতে সঠিক আইনি পথে এগোনো সম্ভব হয়। দখল মুক্তির সময় কখনোই আত্মঘাতী বা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করবেন না; আইনগত সীমাবদ্ধতা ও নিজের নিরাপত্তা বিবেচনায় রাখুন। ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই করা চ্যালেঞ্জিং হলেও, নতুন আইন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিরোধমূলক ক্ষমতা, ধারা ১৪৫-এর দ্রুত প্রক্রিয়া এবং চূড়ান্ত ঘোষণামূলক মামলার মাধ্যমে এখন দ্রুত সমাধান সম্ভব।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত