ঢাকা, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

‘উপকূল শুধু দুর্যোগের ক্ষেত্র নয়, অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি’

পার্থ হক

রিপোর্টার

২০২৫ ডিসেম্বর ১৪ ২০:১৩:১৪

‘উপকূল শুধু দুর্যোগের ক্ষেত্র নয়, অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি’

পার্থ হক: বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, জলবায়ু বিপন্নতার অগ্রভাগে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি উপকূলীয় অঞ্চলের উপর কেন্দ্রীভূত। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলকে প্রাথমিক ‘ব্যাটেলফিল্ড’ হিসেবে দেখা হয়, উপকূলের ভূমিকা শুধু ঝুঁকিতে সীমাবদ্ধ নয়। উপকূলই কৃষির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে; এটি সামুদ্রিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেশের অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি হিসেবেও পরিচিত।

রোববার রাজধানীর বিজয় সরণিতে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দুদিনব্যাপী জাতীয় উপকূল সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে কৃষক, নারী, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি, উপকূলে কর্মরত সংস্থা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজন সক্ষমতার নতুন মেলবন্ধন তৈরি করেছে।

সমাপনী অধিবেশনে উপকূল ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। ঘোষণাপত্রে উপকূলরেখা ও উপকূলীয় এলাকার প্রকৃত আয়তন, স্বাদুপানি, কৃষিজমি, মৎস্যসম্পদ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তথ্য সমন্বয়, ‘ল্যান্ড জোনিং’ পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন, স্থানীয় জেলে-কৃষক-নারী ও তরুণদের ইতিবাচক ভূমিকার স্বীকৃতি এবং সমাজভিত্তিক প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা প্রদানের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া লবণাক্রান্ত এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা, স্বাদুপানির উৎস সংরক্ষণ, জলাধার ও পানি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু তহবিল, ক্ষতি ও বিনষ্টি তহবিল (এলঅ্যান্ডডি) এবং সবুজ অর্থায়নসহ বিভিন্ন দাবি তোলা হয়।

হোসেন জিল্লুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর দায়িত্ব গ্রহণকারী নতুন সরকার এই দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং উপকূলের টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে একটি সবুজ ও কার্বন-নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করবে।

সম্মেলন চলাকালীন জলবায়ু সহনশীলতা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, কমিউনিটি নেতৃত্ব, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা, অন্তর্ভূক্তিমূলক কমিউনিটি বিনির্মাণ, ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর, উদ্ভাবন, সামাজিক সমতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ কেন্দ্রিক দ্বন্দ বিষয়ক সমান্তরাল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

অধিবেশনে অতিথি ও প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন: কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন) মো. এনায়েত উল্লাহ, বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, কর্মজীবী নারী অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন; পানি সম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত