ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

ব্যাংকারদের জন্য শরিয়াহভিত্তিক ঋণ চালুর প্রস্তাব শায়খ আহমাদুল্লাহর

২০২৫ অক্টোবর ১৪ ২৩:৩৭:৪২

ব্যাংকারদের জন্য শরিয়াহভিত্তিক ঋণ চালুর প্রস্তাব শায়খ আহমাদুল্লাহর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শরিয়াহভিত্তিক বাড়ি ও গাড়ি কেনার ঋণ চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা শরিয়াহ মেনে জীবনযাপন করতে চান, তাদের জন্য ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাকে জানিয়েছেন, তারা হাউজ লোন বা গাড়ি লোন নিতে চান, কিন্তু শরিয়াহ মেনে করতে চান। বর্তমানে তাদের জন্য সেই সুযোগ না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে সুদভিত্তিক ঋণ নিতে হচ্ছে। আমি মনে করি, যদি শরিয়াহসম্মত লোনের একটি কাঠামো প্রবর্তন করা হয়, তবে এটি তাদের জন্য এক বিশাল স্বস্তির পথ খুলে দেবে।”

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সীরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত সীরাত মাহফিলে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন আহমাদুল্লাহ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আনিচুর রহমান, এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আফতাব উদ্দিন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “আমি আশা করব, যেসব কর্মকর্তা দ্বীন পালন করতে চান, কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছাকে সম্মান জানাবে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করলে কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ উপকৃত হবেন। এটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোতে শরিয়াহ ঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না—সে বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। ইসলামি ব্যাংকিং মানে শুধু নামেই ইসলামি হওয়া নয়; বরং প্রতিটি কার্যক্রমে শরিয়াহর নীতি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো আরও শক্তভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।”

গ্রাহকদের শরিয়াহ জ্ঞানের ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি—গ্রাহকদের শরিয়াহ সম্পর্কে ধারণা দিতে একটি সার্ভিস সিস্টেম থাকা উচিত। অনেক সময় মানুষ বুঝতে পারে না কোন লেনদেন শরিয়াহসম্মত আর কোনটি নয়। যদি এমন একটি সচেতনতামূলক সিস্টেম চালু করা যায়, তাহলে গ্রাহক ও ব্যাংক উভয়ের জন্যই স্বচ্ছতা ও আস্থা বাড়বে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যেমন—একই সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ হালাল কিন্তু জিনা হারাম, পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে। তেমনি ব্যাংকিংও যদি শরিয়াহর নির্দিষ্ট নিয়মে হয়, তা বৈধ, আর না হলে হারাম। সুতরাং প্রতিটি ব্যাংকের উচিত গ্রাহকদের সেই ধারণা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া।”

কোরআনের বাণী উল্লেখ করে আহমাদুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তাআলা আমাদের ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে বহু জায়গায় ইনসাফের গুরুত্ব এসেছে। ইসলাম শুধু ইবাদতে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়ের আদেশ দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতেও সেই ইনসাফ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।”

তিনি আরও আহ্বান জানান, “আমরা যদি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের পথ প্রসারিত করতে পারি, তাহলে শুধু ব্যাংক কর্মকর্তা নয়, সাধারণ মানুষও সুদমুক্ত জীবনযাপনের দিকে আগ্রহী হবে। এতে অর্থনীতিও পাবে নৈতিক ভিত্তি।”

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত