ঢাকা, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২

বাবার আদর্শে পথে হাঁটছেন বিএনপির নতুন প্রজন্ম

২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ১৭:১৪:৫৫

বাবার আদর্শে পথে হাঁটছেন বিএনপির নতুন প্রজন্ম

মো: আবু তাহের নয়ন :বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষণীয়। দাদা-বাবা-মা-ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী প্রজন্মের রাজনীতিতে আসার ঘটনা অহরহ। অনেক সময় এই পরিবারিক উত্তরাধিকার থেকে শিক্ষিত, মেধাবী, ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরি হয়। আবার এমনও হয়— কেবল পারিবারিক পরিচয়ের কারণে নেতৃত্বের আসনে আসীন হন কেউ কেউ, যাদের নিজস্ব রাজনৈতিক যোগ্যতা তেমন থাকে না।

বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোতেও এই রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সুস্পষ্ট। বিশেষ করে নেতা প্রয়াত হলে সন্তান বা পরিবারের কেউ রাজনীতিতে আসেন, আবার অনেক সময় নেতার জীবদ্দশাতেই সন্তানদের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যায়। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায়ও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এই ধারা। সিনিয়র নেতাদের সন্তান-উত্তরসূরিরা দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন; অনেকেই পরিবারের পাশাপাশি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানও গড়ে তুলেছেন।

ফরিদপুর-২ আসনে মনোনয়ন চাইছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও মন্ত্রী প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে। খুলনা বিভাগের যশোর-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে। ব্যারিস্টার নওশাদ জমির পঞ্চগড়-১ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। তিনি জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে।

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী ঢাকা-৩ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ। ঢাকা-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপির সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে। ঢাকা-৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তরুণ নেতা ইশরাক হোসেন, যিনি ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে শীর্ষ নেতাদের সন্তানদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনে বিএনপির ৬ বড় নেতার ৭ সন্তান দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন (মীর নাছিরের ছেলে), হুম্মাম কাদের চৌধুরী (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে), সাঈদ আল নোমান (আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে), ইসরাফিল খসরু (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে), ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা (সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী (জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র)।

এছাড়া কুমিল্লায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনে প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু মনোনয়ন প্রত্যাশী। নাটোর-২ আসনে বিএনপি নেতা মরহুম ফজলুর রহমান পটলের ছেলে ইয়াসির আরাফাত রাজন এবং তার বোন অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলও মনোনয়ন চাইছেন।

ফরিদপুর-৩ আসনে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে। সিলেট-২ আসনে এগিয়ে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, যিনি নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। রংপুরের ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই মির্জা ফয়সাল আমিন মনোনয়ন চাইছেন। এছাড়া প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনাও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এছাড়াও আরও বেশ কিছু আসনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের উত্তরসূরিরা এবার প্রার্থী হওয়ার আশায় মাঠে আছেন। শেষ পর্যন্ত কারা মনোনয়ন পান, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত