ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২
বীমা খাতে কেলেঙ্কারি: ডামি এজেন্ট বানিয়ে চলছে 'পারিবারিক দুর্নীতি'!

আবু তাহের নয়ন
সিনিয়র রিপোর্টার

আবু তাহের নয়ন: দেশের সাধারণ বীমা বা নন-লাইফ বীমা খাতে একটি গুরুতর অনিয়মের ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কথিত "ডামি এজেন্ট" হিসেবে তাদের পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ব্যবহার করে কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে অর্থ লোপাট করছেন। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)-এর এক প্রতিবেদনে এই ব্যাপক অপব্যবহারের চিত্র উঠে এসেছে।
এই এনএসআই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় অবিলম্বে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (ইডরা) ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার এই কৌশলটি ইডরা-এর নিজস্ব বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও পূর্বে চিহ্নিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনটিতে বিশেষভাবে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা নয়জন নারীকে নিষ্ক্রিয় বা ডামি এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা মোট ৬৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই এজেন্টদের স্বামীরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ও শাখাগুলোতে কর্মরত ছিলেন বলে জানা যায়।
যদিও বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সিং) প্রবিধানমালা ২০২১ অনুযায়ী কর্মকর্তারা একই সাথে বেতন ও কমিশন নিতে পারবেন না, কিন্তু এই নিয়মটি নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আইনিভাবে এজেন্টদের সর্বোচ্চ ১৫% কমিশন পাওয়ার অধিকার থাকলেও, অনেক নন-লাইফ কোম্পানি অবৈধভাবে ৬০% থেকে ৭০% পর্যন্ত অতিরিক্ত কমিশন দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কেবল ১৫% আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়, আর বাকি অর্থ ডামি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচার করা হয়—যা কোম্পানির আর্থিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং ভেতরের লোকদের সমৃদ্ধ করছে।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাজ্জাদ ইয়াহিয়া নিশ্চিত করেন যে অভিযুক্ত এজেন্টদের অপসারণ করা হয়েছে। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "বর্তমানে কোম্পানিতে কোনো নিষ্ক্রিয় বা ডামি এজেন্ট নেই। আমরা দেরি না করে ইডরা-এর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।" ইয়াহিয়া আরও যোগ করেন, বিদ্যমান আইনগুলো কর্মীদের আত্মীয়দের এজেন্ট হওয়াকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে না, যার সুযোগ কিছু ব্যক্তি নিয়েছিল। তবে ইডরা জানিয়েছে, বেশিরভাগ অনিয়মই ২০২১ সালের প্রবিধান কার্যকর হওয়ার আগে ঘটেছিল। শুনানির সময় প্যারামাউন্টকে সতর্ক করা হয় এবং নতুন নিয়ম পুরোপুরি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সমস্যা প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের বাইরেও অনেক বিস্তৃত। তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন যে, কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের নামে দেওয়া কমিশনগুলো তাদের আয় বিবরণী ও কর রিটার্নে সঠিকভাবে দেখানো হচ্ছে কি না। তারা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের অনিয়ম কর ফাঁকি এবং অর্থ পাচারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, একই সাথে দক্ষ পেশাদার এজেন্টের বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করে।
এনএসআই-এর প্রতিবেদনে ইডরা-কে সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য ডামি এজেন্ট নিষিদ্ধ করা, অতিরিক্ত কমিশন দেওয়া বন্ধ করা এবং এজেন্ট নিয়োগগুলো পুনরায় মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এই ডামি এজেন্টদের মাধ্যমে তোলা অর্থ কর প্রদানের জন্য সঠিকভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে কিনা, তা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৮২টি বীমা কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে ৪৬টি নন-লাইফ খাতে কাজ করে এবং ৪৩টি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। নন-লাইফ বীমা মূলত সম্পত্তি, স্বাস্থ্য, মোটর, সামুদ্রিক এবং প্রকৌশল ঝুঁকিগুলোকে কভার করে।
এএসএম/
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান,সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- নতুন দিগন্তে বেক্সিমকো, শেয়ারবাজারে আশার আলো
- দুই বছরের ডিভিডেন্ড পেল তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- বিএসইসি-ডিএসই’র নাকের ডগায় লোকসানি শেয়ার নিয়ে কারসাজি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৬ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইবনে সিনা ফার্মা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারের ৮ কোম্পানি
- চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- দু্ই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- ১৪ প্রতিষ্ঠান রদবদলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে, বাড়ছে আতঙ্ক
- শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থনীতির দুই শীর্ষ নেতার কড়া সমালোচনা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- মুনাফা কমেছে জুতাশিল্পের দুই জায়ান্টের
- উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ কোম্পানিতে
- আর্থিক চাপ কাটাতে ভবন বিক্রি করছে শেয়ারবাজারের দুই প্রতিষ্ঠান