ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

ট্রাম্পের ভিসার ধাক্কায় কাঁপছে ভারতীয় আইটি শেয়ারবাজার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২১ ১৪:২৭:১৮

ট্রাম্পের ভিসার ধাক্কায় কাঁপছে ভারতীয় আইটি শেয়ারবাজার

ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসার ওপর নতুন করে মোটা অঙ্কের ফি আরোপের সিদ্ধান্তের পর মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের প্রবেশ কঠিন করে দেবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ওপর।

গত শুক্রবার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে (এনওয়াইএসই) ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়। ইনফোসিস-এর আমেরিকান ডেপোজিটরি রিসিপ্টস (এডিআর) ৩.৪১ শতাংশ কমে ১৬.৯৭ ডলারে নেমে আসে। একই দিনে উইপ্রো-র এডিআর-এর দরপতন হয় ২.১০ শতাংশ। ভারতের ওপর নির্ভরশীল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কগনিজ্যান্টের শেয়ারও ৪.৭৫ শতাংশ কমে ৬৬.৯৪ ডলারে বন্ধ হয়। এই দরপতন ঘটে কারণ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে এইচ-১বি ভিসার বার্ষিক ফি ১ লাখ ডলার করা হয়েছে, যা ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা। এই ভিসাগুলোই যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসার মেরুদণ্ড।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আদেশের প্রভাব কেবল নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী সোমবার যখন ভারতের শেয়ারবাজার খুলবে, তখন ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলো এর প্রধান শিকার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিলায়েন্স ব্রোকিংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অজিত মিশ্র বলেন, "গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের প্রতিক্রিয়া সপ্তাহের শুরুতে দেখা যাবে। এই পদক্ষেপটি সংবেদনশীল সময়ে আইটি পরিষেবা রপ্তানিকারকদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।" আরেকজন বিশ্লেষক জানান, প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলো ইতিমধ্যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং বাজার খোলার পর তা আরও নিম্নমুখী হতে পারে।

ইনফোসিস ও উইপ্রোর মতো কোম্পানিগুলো এই আদেশের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই দুটি কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের কাছে হাজার হাজার ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার পাঠায়। গত আট মাসে বিএসইতে ইনফোসিসের শেয়ার তার ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ থেকে ২৩ শতাংশ এবং টিসিএস-এর শেয়ার ২৯ শতাংশের বেশি কমেছে। নতুন ভিসার নিয়ম সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর আঘাত হেনেছে। ইনফোসিসের ৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৭৮ জন কর্মীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। টিসিএস-এরও উত্তর আমেরিকায় শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে, যেখানে তাদের ৪৬ হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে।

একজন বিশ্লেষক বলেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগের প্রতিষ্ঠিত মডেলটি সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে। যদি নতুন ফি বাতিল বা কমানো না হয়, তাহলে কোম্পানিগুলোকে হয় স্থানীয়ভাবে আরও বেশি কর্মী নিয়োগ করতে হবে অথবা কাজের একটি বড় অংশ অফশোরে স্থানান্তরিত করতে হবে।"

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কেবল কোম্পানির লাভের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রেমিট্যান্সের ওপরও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত বিশ্বের শীর্ষ রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশ এবং ২০২৪ সালে প্রাপ্ত ১২৯ বিলিয়ন ডলারের প্রায় ২৮ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইনফোমেরিকস ভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রেটিংস লিমিটেডের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনোরঞ্জন শর্মা সতর্ক করে বলেন, ভারতীয় প্রবাসীদের ওপর চাপ বাড়লে কেরালা, উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের মতো যেসব রাজ্য রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল, সেখানকার পরিবারগুলোর মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত