ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২

ভারতে মাছ রফতানি বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ১৪:২৯:৪০

ভারতে মাছ রফতানি বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাছ রফতানি রেকর্ড তৈরি করেছে। বন্দর ও মৎস্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বেনাপোলের মাধ্যমে ১৩,৭৪২ টন চাষকৃত মাছ ভারতের বাজারে পাঠানো হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪৭০.৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩,২১০ টন ছিল মিঠা পানির মাছ যেমন পাবদা, পাঙ্গাস, পারশে, ভেটকি, টেংরা, তেলাপিয়া ও পোনা, এবং ৫৩২ টন ছিল ইলিশ।

গত অর্থবছরে, ২০২৩-২৪ সালে, রফতানি হয়েছিল ৮,২৯২ টন মাছ, যার আয় হয়েছিল ২৫.৪ মিলিয়ন ডলার (৩১২ কোটি টাকার বেশি)। নতুন বছরের রফতানি মাত্র এক বছরে প্রায় ৫,৫০০ টন বা ১২.৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬০ কোটি টাকা) বেড়েছে।

বেনাপোলের ফিশ কোয়ারান্টিন কর্মকর্তা শোজিব সাহা বলেন, “২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ সালে মাছ রফতানি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা রপ্তানিকারকদের জন্য সুবিধা বাড়ানোর কাজ করছি যাতে এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।”

ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে তৃতীয় বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী দেশ। দেশের ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪৮ লাখ টন, আর ২০২৪-২৫ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৫০.১৮ লাখ টন, যার ফলে অতিরিক্ত মাছ রফতানি করা সম্ভব হয়েছে।

দুর্গাপূজার আগে দুই দিনে বেনাপোল দিয়ে ৬৩ টন ইলিশ রফতানি করা হয়েছে। সমগ্র দেশে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯১,০০০ টন মাছ ও মাছের পণ্য রফতানি করেছে, যার মূল্য ৫,১৪৫ কোটি টাকা।

তবে রফতানিকারীরা এখনও দীর্ঘ কাগজপত্র ও অনুমোদনের সমস্যায় পড়ছেন। বেনাপোল থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে খুলনা থেকে অনুমোদন নিতে হয়, যা দ্রুত নষ্ট হওয়া মাছের জন্য ঝামেলার কারণ। বেনাপোল ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিনুল হক বলেন, “খুলনা থেকে অনুমোদন দেওয়ার কারণে রফতানি দেরি হয়। বেনাপোলে অনুমোদনের সুবিধা থাকলে সময় বাঁচবে, রফতানি বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও বৃদ্ধি পাবে।”

যশোরের বড় রফতানিকারী সংস্থা এমইউসিই ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যমল দাস বলেন, “বেনাপোলের মাধ্যমে ভারতের দিকে রফতানি বাড়াতে paperwork সহজ করতে হবে। অনুমোদনের অফিস বেনাপোল বা যশোরের স্থাপন করা উচিত। এখন খুলনায় যেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং ঝামেলার।”

যশোরে মাছ উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪–২৫ সালে জেলায় উৎপাদিত মাছের পরিমাণ ২,৪৮,১৯৪ টন, যার মধ্যে পুকুর ও জলাধার থেকে ১,৫০,১৩১ টন উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের ২,৪৫,০০০ টনের থেকে বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্রদের জন্য মাছ কেনা একটু কঠিন হয়ে গেছে, বিশেষ করে রুই মাছের।

জেলার মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, যশোরে ধারাবাহিকভাবে মাছ উৎপাদন বেড়েছে—২০১৭-১৮ সালে ২,১৮,৬১০ টন থেকে ২০২২-২৩ সালে ২,৪১,১০৭ টন। বর্তমানে যশোরে ২২ ধরনের মাছ চাষ হয়। রুই সবচেয়ে বেশি, ১,৬০,৭৬৫ টন, এরপর পাঙ্গাস ১১,৬৩৬ টন, তেলাপিয়া ১৭,৯০৫ টন, কই ২,৭৭৮ টন, শিং-মাগুর ৫,৯৩৪ টন, গুলশা-পাবদা ১৭,৭১৩ টন, গলদা ৯,৫৬০ টন, বাগদা ৩৫৪ টন, ছোট চিংড়ি ৯০ টন এবং অন্যান্য প্রজাতি ১৪,৯৭৩ টন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, “যশোরে সব সময় মাছের অভাব নেই, বরঞ্চ উৎপাদন বেশি হয়। রফতানি বাড়ালে চাষিরা আরও বেশি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত হবেন।”

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, দায় কার?

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, দায় কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন,... বিস্তারিত