ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২
প্লাস্টিক দূষণ: বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ

ইনজামামুল হক পার্থ
রিপোর্টার

ইনজামামুল হক পার্থ: প্লাস্টিক শুধু ব্যবহার শেষে বর্জ্য হিসেবে নয়, বরং এর পুরো জীবনচক্র—উৎপাদন, ব্যবহার এবং বর্জ্য—পৃথিবী ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। স্টকহোম রেজিলিয়েন্স সেন্টারের প্রধান লেখক প্যাট্রিসিয়া ভিলাররুবিয়া-গোমেজ বলেন, “প্লাস্টিকের উৎপাদন শুরু হয় জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন থেকে এবং মূল পলিমার তৈরির মাধ্যমে। তাই এর প্রভাব কেবল বর্জ্য পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়।”
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিকের দূষণ এত বিস্তৃত যে, এটি মাউন্ট এভারেস্ট থেকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশ নয়, মানব স্বাস্থ্য, সমুদ্র জীববৈচিত্র্য, freshwater ও ভূমি ব্যবহারের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, প্লাস্টিক শুধুমাত্র পলিমার নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার রাসায়নিক—যেমন এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর ও ‘ফরএভার কেমিক্যালস’—মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
প্যাট্রিসিয়া ভিলাররুবিয়া-গোমেজ বলেন, “আমরা ভাবি প্লাস্টিক শুধু আমাদের পণ্য রক্ষা করে, বা জীবন সহজ করে, এবং বর্জ্য হলে সহজে পরিষ্কার করা যায়। কিন্তু এটি বাস্তবতা নয়। প্লাস্টিকের সঙ্গে যে রাসায়নিকগুলো যুক্ত থাকে, তা মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের প্লাস্টিককে এসব রাসায়নিকের সংমিশ্রণ হিসেবে দেখার দরকার।”
লেখক বেথানি কারনি আলমরথ বলেন, “প্লাস্টিক পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চলেও আছে, এবং মানুষের শরীরের ভিতরও। আমরা জানি, প্লাস্টিক জটিল এবং পুরো জীবনচক্রে ক্ষতি করে। তাই এর সমাধানও জটিলভাবে, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব বিবেচনা করে করতে হবে।”
গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০৬ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে। ১৯৫০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোট ১১,০৯০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে। তবে প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারের নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ এখনও চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ঢাকার নদী ও খালগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল এবং প্যাকেজিং সামগ্রী ফেলে দেওয়া হয়, যা জলপ্রবাহকে ব্যাহত করছে এবং পানি নিষ্কাশনের সমস্যা তৈরি করছে।
শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে। বাজারে, স্কুল-কলেজে এবং কৃষি কার্যক্রমে প্লাস্টিকের নির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দূষণ বাড়ছে। নদী, খাল এবং মাঠে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুনঃব্যবহার এবং যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া দেশের পরিবেশ নিরাপদ রাখা কঠিন হবে।
প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক যেমন ফথালেট, বিএফএ এবং ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের ক্ষতি ঘটাতে পারে। বস্তি এলাকা বা যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয় না, সেখানে মানুষের জন্য রোগসংক্রমণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি।
প্লাস্টিকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি
১. হরমোন ও এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের সমস্যা: ফথালেট, বিসফেনল এ (BPA) এবং অন্যান্য “ফরএভার কেমিক্যালস” শরীরে প্রবেশ করলে হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সমস্যা, প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস এবং হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. দীর্ঘমেয়াদী সংক্রামক রোগের ঝুঁকি: কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। ঢাকাসহ বড় শহরের দূষিত এলাকায় প্লাস্টিক কণার ইনহেলেশন বা পানির মাধ্যমে গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক।
৩. প্রজনন ও শিশুদের বিকাশে প্রভাব: গর্ভবতী মহিলা বা শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি, বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস এবং পুনরায় প্রজনন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
৪. ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণ: প্লাস্টিক বর্জ্যে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বৃদ্ধি পায়, যা ডায়রিয়া, চর্মরোগ, ফুডপয়জনিং এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. শ্বাসনালী ও ফুসফুসের সমস্যা: প্লাস্টিক ধ্বংস বা পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ক্ষুদ্রকণা উৎপন্ন হয়, যা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমাতে পারে।
জীববৈচিত্র্য ও কৃষি প্রভাব
প্লাস্টিক দূষণ মাটি ও জলভাগে পৌঁছালে মাটির উর্বরতা কমে এবং ফসলের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে। নদী ও খালগুলোতে প্লাস্টিকের কারণে মাছ ও জলজ প্রাণীর খাদ্যচক্র ব্যাহত হচ্ছে। ফলস্বরূপ, স্থানীয় মৎস্যসম্পদ ও কৃষি নির্ভর জীবিকা বিপর্যস্ত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে।
গবেষকরা অনুরোধ করছেন, আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক চুক্তি ও নীতি নির্ধারণে প্লাস্টিক দূষণকে কেবল বর্জ্য সমস্যা হিসেবে না দেখে, পুরো জীবনচক্রের প্রভাব অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এতে প্লাস্টিকের পৃথিবী ব্যবস্থার ক্ষতি দ্রুত শনাক্ত এবং কমানো সম্ভব হবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের যুগান্তকারী ঘোষণা
- বাংলাদেশে বনাম আফগানিস্তান,খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- আফগানিস্তান বনাম বাংলাদেশ, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- ডুবছে ওষুধের দুই কোম্পানি, বিনিয়োকারীদের কপালে চিন্তার ভাজ
- সাত কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির গন্ধ!
- RSI এলার্ট: ১০ শেয়ারে বিপদ সংকেত
- শেয়ারবাজারের কোম্পানিতে কারসাজির গন্ধ! তদন্তে নেমেছে বিএসইসি
- ঢাবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে জাপান, আবেদন করবেন যেভাবে
- উৎপাদন বন্ধ চার কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সতর্কতা জারি
- জেডে নেমে তিন শেয়ারের ধস, বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কা
- মশিউর সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বিএসইসির বড় পদক্ষেপ, আসছে নতুন নিয়ম