ঢাকা, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রদলের পদপ্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে বিবাহিত, অছাত্র ও বিতর্কিতরা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ০১:১৬:১০

ছাত্রদলের পদপ্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে বিবাহিত, অছাত্র ও বিতর্কিতরা

তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে। যেখানে বিবাহিত, অছাত্র, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন সহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংগঠনের ভেতরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ফলে রাজপথে সক্রিয় ত্যাগী ও নিয়মিত ছাত্রনেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইমরান হোসেন প্রধানকে আহ্বায়ক ও আল-আমিনকে সদস্য সচিব করে ২০২১ সালের ১৬ জুন ২৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাসের জন্য এ কমিটি হলেও চার বছরেরও বেশি সময় ধরে একই কাঠামোয় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশই মাঠে সক্রিয় নন। অনেকের ছাত্রত্বও শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছরের ২১ মে মুক্তমঞ্চে কর্মীসভা ও ২২ মে ভাইভা অনুষ্ঠিত হলেও এখনও নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি।

আসন্ন কমিটির সভাপতি পদপ্রার্থী চারুকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন ২০১৮ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। কাগজপত্র অনুযায়ী তিনি ২০২২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ২০২৩ সালে তার সন্তানের জন্ম হয়। তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আইন অনুষদ ছাত্রলীগের উপ ক্রীড়া সম্পাদক সানোয়ার রাব্বি প্রমিজকে পুনর্বাসনের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে উঠেছে।

অন্য সভাপতি পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ত্রিশালের একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। তিনি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এবং ছাত্রলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি মো. উবায়দুল্লাহর আপন চাচা। তার নেতৃত্বে কর্মীসভায় ছাত্রলীগের আইন অনুষদের সহ সভাপতি তোফায়েল আহমেদসহ একাধিক নেতা পুনর্বাসিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি কমিটি আনতে টাকা লেনদেনের কিছু স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে।

সভাপতি পদপ্রার্থী মামুন সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক মারুফ হাসানকে পুনর্বাসন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

আরেক সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরান ফরাজীর অনুসারী জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শোকজ নোটিশ পেয়েছেন। সে বিষয়ে দেশের একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

অছাত্র ও বিতর্কিত প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে হতাশ হয়ে পড়েছেন মাঠের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ- ছাত্রত্ব শেষ, বিবাহিত কিংবা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের পদপ্রত্যাশী করা হলে সংগঠনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মহিউদ্দিন বলেন, আসলে আমরা তো চেষ্টা করছি কমিটি আনার ব্যাপারে, কিন্তু সেন্ট্রালে কাজের চাপ আবার ডাকসু নির্বাচন এরজন্য একটু সময় লাগছে। ছাত্রত্ব শেষ এবং স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও সভাপতি পদে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তার স্বর পাল্টে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝছি তুমি কি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছো। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব।’

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি বলেন, ‌‘টাকা লেনদের স্ক্রিনশট সুপার এডিট করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপ এটি ফেসবুকে দিয়েছিল। পরে তারা সংশোধন করেছে। ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. উবায়দুল্লাহর সাথে দীর্ঘদিন ধরে আমার যোগাযোগ নেই। আমি ছাত্রলীগের কাউকে পুনর্বাসন করিনি। যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।’

জানতে চাইলে মামুন সরকার বলেন, ‘মারুফ হাসানকে আমি চিনি না। আপনার কাছে যে ছবি রয়েছে সেটি আমাকে পাঠান। এরপর দেখে বলতে পারব। নির্বাচনে বহিষ্কৃত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। আমি ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সে হিসেবে সামান্য কিছু কাজ করেছি। এটা তেমন কোনো বিষয় না।’

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী তোফায়েল ইসলামের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পূর্বে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মাশরুম আহমেদ ইনানের বিবাহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কারাবন্ধী অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) সংসদীয় আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি এমএ হান্নানের ভাতিজা। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হান্নান মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হয়েছিলেন।

বিয়ের ভাইরাল ছবির বিষয় অস্বীকার করে ইনান বলেন, 'স্টুডেন্টের বিয়ের সাক্ষী হিসেবে ছিলাম, আমি বিয়ে করলে অবশ্যই ডকুমেন্ট থাকতো।' যুদ্ধাপরাধীর ভাতিজা নিয়ে তিনি জানান, 'আমাদের গোষ্ঠীর কেউ না, উনার কাছে আমাদের গোষ্ঠীর মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হইছিল, এছাড়া আর কিছু না।'

অপর প্রার্থী তোফায়েল ইসলাম নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে বলেন, '৫ আগস্টের পূর্বে আমি হরতাল-অবরোধ সহ সকল প্রকার প্রোগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্তে এগুলোর প্রমান রয়েছে। আমার পরিবার জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, আপনারা খোঁজ নিতে পারেন।'

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি সংক্রান্ত টিম লিডার ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শাকির আহমেদ বলেন, ‘আপনার কাছে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তার আংশিক সত্য। আমরা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করছি। প্রার্থীদের সবকিছু যাচাই করা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কমিটি দেওয়া হবে।’

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত