ঢাকা, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া প্রশাসন কাজ করে নাঃ রিজওয়ানা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ১৭:২০:৩৫

রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া প্রশাসন কাজ করে নাঃ রিজওয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সিলেটের পাথর উত্তোলনের দায় এখন একে অন্যের ওপর চাপালেও এটি অনেক আগে থেকেই চলছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের কাঁধে বন্দুক রেখে বলা হচ্ছে এসব ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বাস্তবে সিলেটের পাথরমহালগুলো থেকে পাথর উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরেই নির্বিঘ্নে চলছিল।”

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “যদি রাজনৈতিক সমর্থন না থাকে, তাহলে প্রশাসন কখনো সহায়তা করে না। আর প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া অবৈধ পাথর উত্তোলন ঠেকানো অসম্ভব। জলাধার রক্ষা বা নদী উদ্ধারেও আমরা বারবার প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা দেখেছি।”

রিজওয়ানা জানান, তিনি পাথর উত্তোলনের বিষয়ে প্রথম মামলা করেন ২০০৯ সালে, যদিও তা শুরু হয়েছিল আরও দুই বছর আগে। পরবর্তীতে লম্বা আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ২০২০ সালে জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। কিন্তু তারপর থেকেই তা পুনরায় শুরু করার চেষ্টায় লিপ্ত হয় কিছু মহল।

তিনি বলেন, “বর্তমানে বলা হচ্ছে কয়েক দিনে ৩০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। অথচ ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকার মাত্র ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এই অস্বাভাবিক বৈষম্য প্রমাণ করে— আমরা লুটেরাদের নিজেরাই তৈরি করেছি।”

রিজওয়ানা হাসান জানান, দেশের পাথরের চাহিদার মাত্র ৬ শতাংশ পূরণ হয় স্থানীয়ভাবে, বাকিটা আমদানি করা হয়। তাহলে এত গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্থান সংরক্ষণে আমরা ব্যর্থ হলাম কেন— সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ভারত তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে পর্যটন উন্নয়ন করেছে। অথচ বাংলাদেশে জাফলংসহ নানা জায়গা এখনো অবহেলায় পড়ে আছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে পাথরের দায়িত্বে না থাকলেও সিলেটের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি এবং পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছি। আমরা শুধু সাদা পাথরের কথা বলি, কিন্তু বাকখালি নদীর দখল-দূষণের কথা বলি না। সেখানে পাঁচ দিনের উচ্ছেদ কার্যক্রম ছিল, তিন দিন চালানো গেলেও বাকি দুই দিন বাধার মুখে থেমে যায়। আমরা রাজনৈতিক সমর্থন চাই, যেন বাকখালি নদীকে সম্পূর্ণরূপে দখলমুক্ত করা যায়।”

চলনবিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে সীমানা নির্ধারণ করে আদেশ জারি করা হবে যাতে ভরাট বন্ধ রাখা যায়। আড়িয়াল বিল, চলনবিল এবং বেলার বিল নিয়েও কাজ চলছে।

ঢাকার জলাধার বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ৪০টি পুকুর উদ্ধারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিছু খাল খননের ফলে বর্ষায় ঢাকায় জলাবদ্ধতা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। তবে খালগুলো ড্রেজিং করার দুই মাসের মধ্যেই আবার মাটি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। সুয়ারেজ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা কাটানো যাবে না।”

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তিনি বলেন, “আমিনবাজার প্রকল্পকে মডেল ধরে বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের চিন্তা চলছে।”

হাওর রক্ষায় রিজওয়ানা হাসান জানান, হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি করা হয়েছে এবং হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। হাউস বোট পরিচালনার জন্য গাইডলাইন প্রণয়নের কাজও চলছে।

নদী বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের নদীগুলোর তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে, তবে সুন্দরবন ও পার্বত্য এলাকার নদীগুলো এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ নদী চিহ্নিত করতে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি সীমান্তবর্তী নদীগুলোর তালিকাও তৈরি করা হবে।

ইএইচপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত