ঢাকা, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২
উঠানামার শেয়ারবাজারে যেভাবে মিলবে নিশ্চিত মুনাফা

আলী হায়দার: শেয়ারবাজারের স্বভাবই হলো ওঠানামা করা—কখনো দাম বাড়ে, কখনো কমে। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে ঝুঁকির মনে হলেও, অভিজ্ঞ ট্রেডারদের কাছে এটি আসলে মুনাফার সুযোগ। কারণ, সঠিক সময়ে কেনা-বেচা করতে পারলে বাজারের ছোট ছোট পরিবর্তনও লাভে পরিণত হয়। এভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুইং ট্রেডিং, যেখানে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিনিয়োগকারীরা বাজারের ক্ষুদ্র ওঠানামা কাজে লাগিয়ে নিশ্চিত মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করেন।
সুইং ট্রেডিং কী?
সুইং ট্রেডিং হলো স্বল্পমেয়াদী শেয়ার ট্রেডিংয়ের একটি কৌশল, যেখানে সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শেয়ার কেনা-বেচা করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে অপেক্ষা না করে, বাজারের ক্ষুদ্র ওঠানামার সুবিধা নিয়ে দ্রুত লাভ তোলা হয় এই কৌশলে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো শেয়ারের দাম যদি ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় ওঠে, তখন ১০০ টাকায় কিনে ১১০ টাকায় বিক্রি করলে বিনিয়োগকারী ছোট কিন্তু নিশ্চিত মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
বাজার বোঝার গুরুত্ব
শেয়ারবাজার কখনোই সরলরেখায় চলে না; বরং এটি একবার উপরে ওঠে আবার নিচে নামে—ঠিক যেন সমুদ্রের ঢেউ। এই ওঠানামার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে লাভের সুযোগ। একজন দক্ষ বিনিয়োগকারী যদি সঠিক সময়ে এ প্রবণতা ধরতে পারেন, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব। এজন্য বাজারের প্রতিটি ধাপ, খবর, আর্থিক সূচক এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য। যারা বাজারের প্রবাহ গভীরভাবে বোঝেন, তারাই স্বল্পমেয়াদে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিতে সক্ষম হন।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ অপরিহার্য
সুইং ট্রেডিংয়ে সফল হতে হলে আন্দাজে নয়, বরং তথ্য ও বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করতে হবে। এজন্য ব্যবহার করা হয় টেকনিক্যাল এনালাইসিস বা প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ। শেয়ার চার্টের ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্ন, লেনদেনের ভলিউমের পরিবর্তন, মুভিং এভারেজ, এমনকি Relative Strength Index (RSI) ট্রেডারকে ইঙ্গিত দেয় শেয়ার কখন কিনতে হবে আর কখন বিক্রি করতে হবে। এই বিশ্লেষণকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি কমিয়ে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা সুইং ট্রেডিংয়ে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের কৌশল
শুধু লাভের দিকে তাকিয়ে ঝুঁকিকে ভুলে গেলে ট্রেডিং বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে। তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুইং ট্রেডিংয়ে এ জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো স্টপ লস ব্যবহার করা। ধরুন, আপনি একটি শেয়ার কিনলেন ১০০ টাকায়। যদি সেই শেয়ারের দাম ৯৫ টাকার নিচে নেমে যায়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি বিক্রি হয়ে যাবে। এতে কিছুটা ক্ষতি হলেও বড় ধরনের লোকসান থেকে বাঁচা যায়। এভাবে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ না করলে বাজারের হঠাৎ পতন একজন বিনিয়োগকারীর পুরো মূলধনকে বিপদে ফেলতে পারে।
নতুনদের জন্য করণীয়
সুইং ট্রেডিং শুনতে আকর্ষণীয় হলেও এতে ঝুঁকি কম নয়। তাই নতুন বিনিয়োগকারীদের উচিত অল্প মূলধন দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু করা। বাজারের প্রবণতা বোঝা, চার্ট পড়ার কৌশল শেখা এবং অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া এ সময় খুবই কার্যকর হতে পারে। এক্ষেত্রে ধৈর্য ও মানসিক স্থিরতা সবচেয়ে বড় শক্তি। ছোট ছোট মুনাফা হয়তো তৎক্ষণাৎ বড় অঙ্কে পরিণত হয় না, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে করলে এই সামান্য লাভই সময়ের সাথে উল্লেখযোগ্য সম্পদ গড়ে তুলতে পারে।
শেষ কথা
সব মিলিয়ে বলা যায়, সুইং ট্রেডিং হলো স্বল্পমেয়াদে শেয়ারবাজার থেকে লাভ তোলার একটি কার্যকর পদ্ধতি। তবে এর সফলতা ভাগ্যের ওপর নয়, বরং নির্ভর করে সঠিক জ্ঞান, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের ওপর। যারা আবেগের বশে নয়, বরং পরিকল্পিত কৌশল অনুসরণ করেন, তারাই শেয়ারবাজারের এই ওঠানামার মধ্যে থেকেও নিশ্চিত মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
লেখক: শেয়ারবাজার এনালিষ্টি
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ১১ কোম্পানিতে
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- পাকিস্তান বনাম সংযুক্ত আরব আমিরাত সাম্প্রতিক ম্যাচের পরিসংখ্যান
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- মার্জারের সাফল্যে উজ্জ্বল ফার কেমিক্যাল
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- শেয়ারবাজারে দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি ট্রেডিং টিপস
- তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- ডেনিম উৎপাদন বাড়াতে এভিন্স টেক্সটাইলসের বড় পরিকল্পনা
- পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা