ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২

ট্রাইব্যুনালে দায় স্বীকার, রাজসাক্ষী হলেন সাবেক আইজিপি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ০৯:৩৫:৫৬

ট্রাইব্যুনালে দায় স্বীকার, রাজসাক্ষী হলেন সাবেক আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।

সাক্ষ্যে মামুন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশ তাঁকে জানানো হয় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরই সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা শুরু হয়।

গত ১০ জুলাই এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বাকি দুই আসামি পলাতক। গ্রেপ্তার হওয়া মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি মামলার ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য দেন।

তার দাবি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন। মামুন বলেন, শেখ হাসিনা ও কামালের প্রত্যক্ষ নির্দেশে গণহত্যা চালানো হয়।

সাবেক আইজিপি জানান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন— এরা সবাই প্রধানমন্ত্রীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করেছিলেন।

তিনি বলেন, আন্দোলন দমনের কৌশল ঠিক করতে গত বছরের জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসভবনে একাধিক বৈঠক হয়। এসব সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা অংশ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের গ্রেপ্তারের প্রস্তাব আসে ডিজিএফআই থেকে। শুরুতে তিনি আপত্তি করলেও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে রাজি হন।

মামুন স্বীকার করেন, র‌্যাবপ্রধান থাকার সময় ক্রসফায়ার, আটক ও নির্যাতনের ঘটনা তিনি জানতেন, কিন্তু কখনো তদন্ত করেননি। তার ভাষায়, এসব সিদ্ধান্ত আসত গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এবং চেইন অব কমান্ড মানা হতো না।

৫ আগস্ট তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে অবস্থান করছিলেন। দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পান। বিকেলে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তাঁকে ক্যান্টনমেন্টে নেওয়া হয়। ৬ আগস্ট আইজিপি পদ থেকে অব্যাহতি এবং ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত গণহত্যার দায় স্বীকার করছি। নিহতদের পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চাইছি। ভিডিওতে যে ভয়াবহতা দেখেছি, তা আমাকে আঘাত করেছে। তাই সত্য তুলে ধরতেই আমি রাজসাক্ষী হয়েছি।”

সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন তাঁকে জেরা শুরু করেন, যা আজ (বুধবার) অব্যাহত থাকবে।

ইএইচপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত