ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২
তীব্র প্রতিযোগিতায় ভারত-পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র
                                    ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, যেখানে উভয় দেশই তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করছে। সম্প্রতি ভারত মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যা এই প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গত ২০ আগস্ট বঙ্গোপসাগরের পূর্ব উপকূল থেকে ওডিশার একটি পরীক্ষামূলক কেন্দ্র থেকে অগ্নি-৫ এর পরীক্ষা চালানো হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৭.৫ মিটার লম্বা এবং এর ওজন ৫০ হাজার কেজি, যা এক হাজার কেজির বেশি পারমাণবিক বা প্রচলিত পেলোড বহন করতে সক্ষম। এটি ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার গতিতে ৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে এবং বিশ্বের দ্রুততম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অগ্নি-৫ এর এই পরীক্ষাটি এমন সময়ে হলো, যখন এর ঠিক এক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তান নতুন আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের ঘোষণা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মে মাসে দুই পারমাণবিক-শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে চার দিনের সংঘর্ষে ভারতের কাছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল, তা পূরণ করতেই এই পদক্ষেপ।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ভারতের এই সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পাকিস্তানের জন্য যতটা না বার্তা বহন করে, তার চেয়ে বেশি বার্তা বহন করে চীনের জন্য। ভারত এখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধের পর। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ব্যাপারে উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে।
অগ্নি-৫ এর পাল্লার মধ্যে চীনের উত্তরাঞ্চলসহ এশিয়ার বেশিরভাগ অংশ এবং ইউরোপের কিছু অংশও রয়েছে। ২০১২ সালের পর এটি ছিল ক্ষেপণাস্ত্রটির দশম পরীক্ষা এবং গত বছরের মার্চের পর প্রথম। এই পরীক্ষাটি এমন এক সময় করা হলো যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন। যদিও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা থাকলেও এখন সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের এই পরিবর্তনের পরও ভারত চীনকে তার প্রধান হুমকি হিসেবেই দেখে, যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দুই দেশের জটিল সম্পর্ককে তুলে ধরে। তারা আরও বলেন, ভারত তার মধ্যম ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মূলত চীনকে লক্ষ্য করেই তৈরি করছে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও পাকিস্তান ক্রমাগত তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে এবং নতুন নতুন উন্নত ব্যবস্থা সামনে আনছে। এআরএফসি-এর ঘোষণা দেওয়ার আগে পাকিস্তান ফাতাহ-৪ নামে একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে, যার পাল্লা ৭৫০ কিমি এবং এটি প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে।
এদিকে, ভারত অগ্নি-৬ নিয়ে কাজ করছে, যা ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি পাল্লার হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এমআইআরভি-সক্ষম হবে, অর্থাৎ একাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করে প্রতিটি আলাদা আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স স্টাডিজ সেন্টারের সাম্মানিক প্রভাষক মনসুর আহমেদ বলেন, ভারতের এই সবশেষ পরীক্ষা তাদের ক্রমবর্ধমান আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতারই প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, ভারত যখন বিভিন্ন সক্ষমতাসহ অগ্নি-এর বিভিন্ন সংস্করণ নিয়ে কাজ করছে, তখন এই পরীক্ষাটি ভারতের উদীয়মান সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার একটি প্রযুক্তিগত প্রদর্শক। ভারতের এসএলবিএমগুলোর ওয়ারহেডের ধরনের ওপর নির্ভর করে, ভারত আগামী দশকে তার এসএসবিএন বাহিনীর মাধ্যমে ২০০-৩০০ ওয়ারহেড মোতায়েন করতে সক্ষম হবে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের কাছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক সাবমেরিন নেই। তাদের সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার অপারেশনাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শাহিন-৩। যার পাল্লা ২ হাজার ৭৫০ কিমি। আহমেদ বলেন, পাকিস্তানের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এমআইআরভি-সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার নাম আবাবিল। এটি ২ হাজার ২০০ কিমি পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে, কিন্তু এটি যেকোনো পারমাণবিক-শক্তিধর দেশ দ্বারা মোতায়েন করা সবচেয়ে কম পাল্লার এমআইআরভি-সক্ষম ব্যবস্থা।
পাকিস্তানের সাবেক সেনা ব্রিগেডিয়ার এবং পারমাণবিক নীতি বিষয়ক পণ্ডিত তুঘরুল ইয়ামিন বলেন, দুই দেশের ক্ষেপণাস্ত্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকারকে প্রতিফলিত করে। ইয়ামিন বলেন, পাকিস্তানের কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ভারত-নির্দিষ্ট এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতির, আর ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা উপমহাদেশ ছাড়িয়ে গেছে। এর দূরপাল্লার ব্যবস্থাগুলো মূলত বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
তবে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের অ্যাশলি জে টেলিস বলেন, পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি শুধু ভারত কেন্দ্রিক নয়। ইসলামাবাদ ভারত ছাড়াও ইসরায়েল এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকেও তার পাল্লার মধ্যে রাখার সক্ষমতা তৈরি করছে। টেলিস বলেন, উভয় দেশের প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে পাইলট-চালিত যুদ্ধবিমানকে ঝুঁকিতে না ফেলেই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা যায়।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনাল: কবে, কখন-যেভাবে দেখবেন লাইভ
 - ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি(LIVE) দেখুন
 - ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি ফ্রিতে সরাসরি(LIVE) দেখুন
 - আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-টোয়েন্টি: যেভাবে দেখবেন লাইভ (LIVE)
 - ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৯৫ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
 - ডিএসই’র দুই ব্রোকারেজের ট্রেডিং লাইসেন্স বাতিল
 - বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় টি-২০: কবে, কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন খেলাটি
 - ইপিএস প্রকাশ করেছে ৬৮ কোম্পানি, দেখুন এক নজরে
 - মার্জিন রুল থেকে মিউচুয়াল ফান্ড—সবখানেই আসছে বড় পরিবর্তন
 - দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম পাকিস্তান, খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখুন
 - পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখবেন যেভাবে
 - বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩য় টি-টোয়েন্টি: খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখবেন যেভাবে
 - এবারও বিনিয়োগকারীদের হতাশ করল মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ
 - ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া: খেলাটি মোবাইলে সরাসরি দেখুন (LIVE)
 - ইপিএস প্রকাশ করেছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক