ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পকে পক্ষে নিয়ে ভারতকে যেভাবে বেকায়দায় ফেলেছে পাকিস্তান

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ আগস্ট ১৩ ০৭:৩৩:৩৭
ট্রাম্পকে পক্ষে নিয়ে ভারতকে যেভাবে বেকায়দায় ফেলেছে পাকিস্তান

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মার্কিন সেনা নেতৃত্বের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। চলতি গ্রীষ্মে এটি তাঁর দ্বিতীয়বারের মতো এমন সংবর্ধনা। সম্প্রতি ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলার অবসর অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এর আগে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বিশেষ অবদানের জন্য মুনিরকে প্রশংসা করেছিলেন কুরিলা। সফরের অংশ হিসেবে মার্কিন জেনারেল ড্যান কেউনকে পাকিস্তান সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও জানান মুনির।

এর আগে জুন মাসে ওয়াশিংটনে গিয়ে দুই ঘণ্টার ব্যক্তিগত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। এর মাত্র এক মাস আগে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় সংঘর্ষ ঘটে। বিশেষজ্ঞদের কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে যে, পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন হয়েও মুনির কোনো সরকারপ্রধান নন, অথচ ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গুরুত্ব দিচ্ছে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর শুরুতে ধারণা ছিল, ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক অবনতির দিকে যাবে। তিনি পাকিস্তানকে ‘মিথ্যা ও প্রতারণা’র অভিযোগে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো দিকে মোড় নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে, আর এই দৃশ্যপট ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্বে ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও বর্তমানে নয়াদিল্লি উপেক্ষিত বোধ করছে।

এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পুনরুত্থান সত্যিই অপ্রত্যাশিত—এটিকে নতুন রেনেসাঁও বলা যায়। পাকিস্তান খুব ভালোভাবেই জানে কীভাবে প্রচলিত নিয়ম ভেঙে চলা একজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে হয়।”

ভারত ও পাকিস্তানের এ বিপরীত কূটনৈতিক গতিপ্রকৃতি আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে। বাণিজ্যেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে—যেখানে পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৯% শুল্ক আরোপ করেছে, সেখানে ভারতের ক্ষেত্রে তা ৫০% পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে বিশাল তেলভান্ডার উন্নয়নের জন্য ট্রাম্প চুক্তি করেছেন এবং আরও কিছু বিনিয়োগ চুক্তির কথাবার্তা চলছে, যা অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটির জন্য বড় আশার খবর।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের এই বাড়তি প্রভাব মূলত শীর্ষ জেনারেলদের সক্রিয় ‘তোষামোদি কূটনীতি’র ফল। এতে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযোগ, এবং জ্বালানি, বিরল খনিজ ও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে চুক্তি অন্তর্ভুক্ত। ইসলামাবাদ মনে করছে, আফগানিস্তানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগ কাটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সহযোগীদের মন জয় করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি স্থাপনে ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়েছে ইসলামাবাদ। এমনকি তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ারও প্রস্তাব করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে মুনির বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’ বিশ্বের বহু সংঘাত বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি মনে করেন, “ট্রাম্প কিছু সাফল্যের গল্প খুঁজছিলেন, আর পাকিস্তান সেটি আনন্দের সঙ্গেই তাঁকে দিয়েছে।”

বিপরীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের শান্তি-প্রচেষ্টার ভূমিকা অস্বীকার করেছেন, যা দিল্লির জন্য ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ ঘনিষ্ঠতা আরও জটিল করে তুলেছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত