ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
শেয়ারবাজার সংস্কারে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা: এপিট-ওপিট

গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেয়ারবাজারের সংস্কার ছিল তাদের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি। এক বছর পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের ৩০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই সংস্কারের ফলাফল মিশ্র: একদিকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, অন্যদিকে অনেক কাঠামোগত পরিবর্তন এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
একটি স্পষ্ট পরিবর্তন হলো, একসময় সূচক বাড়ানোর জন্য ব্রোকারদের শেয়ার কেনার জন্য বিএসইসি’র পক্ষ থেকে যে নিয়মিত চাপ আসত, তা এখন বন্ধ হয়েছে। ব্রোকার হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রথমবারের মতো বিএসইসি সূচকের পেছনে না ছুটে সংস্কারের পেছনে ছুটছে।
জালিয়াতি রোধে কঠোর অবস্থান
নতুন কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ-এর নেতৃত্বে বিএসইসি গত এক বছরে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা মামলাগুলো নতুন করে শুরু করেছে। শেয়ার কারসাজির জন্য ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা আরোপ করা হয়েছে, যা ১৯৯৩ সালে কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বোচ্চ। আগে অবৈধ লাভের ২০ শতাংশ জরিমানা করা হলেও, এখন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে আলোচিত মামলার মধ্যে একটি ছিল বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির ঘটনা। এই অভিযোগে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এবং চারজনের বিরুদ্ধে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া, সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামকে একটি প্রতারণামূলক বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও ১৯০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান-এর নামও রয়েছে।
কাঠামোগত সংস্কার
নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর একটি পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই টাস্কফোর্স গত জুনে আইপিও নিয়ম, মার্জিন ট্রেডিং এবং মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত সংস্কারের একটি ব্লুপ্রিন্ট জমা দিয়েছে। তবে সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান সিদ্দিকী মনে করেন, এই প্রস্তাবগুলো আনতে এতটা সময় লাগা উচিত ছিল না।
একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, আইপিও অনুমোদনের প্রক্রিয়া ডিজিটাল করা হচ্ছে, যাতে প্রভাব খাটানোর সুযোগ কমে যায়। ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম আশা করছেন, এই বছরই এটি পুরোপুরি কার্যকর হবে।
এছাড়াও, নতুন বাজেটে বিও অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে, ব্রোকারদের টার্নওভার ট্যাক্স ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.০৩ শতাংশ করা হয়েছে এবং তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে।
বাজারের গতিপ্রকৃতি
আগের সরকারের পতনের পর ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তিন দিনে ৫৮৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার০০০ ছাড়িয়েছিল। এরপর তা ৪ হাজার৬১৫-তে নেমে গেলেও, সম্প্রতি আবার ৫ হাজার৩৫০-এর উপরে উঠেছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়িত ছিল, তাই এই পুনরুদ্ধার স্বাভাবিক। তারা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার কমাও বাজার বাড়াতে সহায়তা করেছে।
তবে এখনও অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। গত এক বছরে কোনো নতুন আইপিও বাজারে আসেনি। বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, "আমরা স্বচ্ছতার একটি সংস্কৃতি শুরু করেছি। বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে ফিরে আসছেন। আমরা এখনো লক্ষ্যে পৌঁছাইনি, তবে সঠিক পথেই আছি।"
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না বস্ত্র খাতের ১৩ কোম্পানি
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে আর্থিক খাতের কোম্পানি
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৭ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দুই কোম্পানির বাজিমাত
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
- রবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের মুখে গ্রামীণফোন
- টানা পতনেও শেয়ারবাজারে পুনরুজ্জীবনের সংকেত