ফের তিন স্তরের পদোন্নতি শুরু হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের

প্রশাসনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য তিন স্তরের পদোন্নতির প্রস্তুতি আবার শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাবেন। এছাড়া সেপ্টেম্বরে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ আসতে পারে যেখানে নিয়মিতভাবে ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

বিসিএস ২৪তম ব্যাচের ‘পদোন্নতিবঞ্চিত’ ১৮২ জন কর্মকর্তার মধ্যে অনেককেই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ইতিমধ্যে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ, সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি), পদোন্নতির জন্য যোগ্য আটশর বেশি কর্মকর্তার চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেছে।

আগামীকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে এসএসবি আবারও বৈঠকে বসবে। এই বৈঠকে পদোন্নতির জন্য প্রার্থী কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের নথিপত্র, প্রয়োজনীয় নম্বর, শৃঙ্খলা, দুর্নীতি সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্যালোচনা করা হবে।

এরপর আরেক দফা বৈঠকের মাধ্যমে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদন লাভের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রশাসনের তিন স্তরের পদোন্নতির কাজ চলছে। চলতি মাসের মাঝের দিকে উপসচিব এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবের পদোন্নতি দেওয়ার টার্গেট রয়েছে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত ২১২ পদে বর্তমানে ৩৫৮ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে কাজ করছেন এক হাজার ২৮ জন আর উপসচিব পদে সুপারনিউমারারি পদসহ এক হাজার ৪২০টি অনুমোদিত পদে আছেন প্রায় এক হাজার ৪০০ জন কর্মকর্তা। অর্থাৎ প্রতিটি পদে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন।

ফলস্বরূপ পদ শূন্য না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের পূর্ববর্তী পদে থেকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পদোন্নতির নিয়ম অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব পদে অন্তত পাঁচ বছরের চাকরি ও মোট ১০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করলে উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ পাওয়া উচিত। বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এই যোগ্যতা ২০২২ সালের ৩ জুন পূরণ করেছেন তবুও এখনো তাদের পদোন্নতি দেয়নি।

উপসচিব : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগ দেন বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সেই হিসাবে তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয় ২০২২ সালের ৩ জুন। তবে নানা কারণে ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি উপসচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসনসচিবসহ এসএসবিতে বড় পরিবর্তন আসে। নানা কারণেই আর ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির দরজা খোলেনি। এই ব্যাচে ২৭৭ জন কর্মকর্তা ২০১২ সালে যোগদান করেন। লেফট আউটসহ প্রশাসন ক্যাডারের ৩১৯ কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ কর্মকর্তা ডিএস পুলে যোগ দিতে আবেদন করেছেন। তাদের মধ্য থেকে অন্তত আড়াই শ কর্মকর্তার পদোন্নতি হতে পারে বলে জানা গেছে।

অতিরিক্ত সচিব : যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ২০তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ কর্মকর্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সব মিলে পদোন্নতির জন্য প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাচের ৪৩ কর্মকর্তা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলার ডিসি এবং ৪০ কর্মকর্তা মন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) ছিলেন। তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে না। ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া ১৯৯৯ সালে শেষ হয়। ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের পদোন্নতি হয়েছে ২০২১ সালে। যুগ্ম সচিব হিসেবে দুই বছর চাকরি করলেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়েছে।

যুগ্ম সচিব : সরকার ২০ মার্চ প্রশাসনে বিসিএস ২৪তম ব্যাচসহ অতীতে পদোন্নতিতে বঞ্চিত ১৯৬ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে উন্নীত করেছে। তবে নানা জটিলতার কারণে ২৪তম ব্যাচের পাঁচজন জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ১৮২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগের পর বঞ্চিত কর্মকর্তারা ব্যাপক আবেদন করায় পদোন্নতি পুনঃপর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের একশর বেশি কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ১০০ থেকে ১৫০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।