ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

হাসনাত ও সারজিসকে মাইনাসের গুঞ্জন

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৭ ১১:৪৫:২৭
হাসনাত ও সারজিসকে মাইনাসের গুঞ্জন

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাদের কক্সবাজার সফর ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র আলোচনা ও বিতর্ক। দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং আরও কয়েকজন নেতা এই সফরে অংশ নেন। সফরের সময় গুঞ্জন ছড়ায় তারা কক্সবাজারে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন।

তবে এনসিপির নেতৃবৃন্দ ও মার্কিন দূতাবাস উভয় পক্ষই এমন কোনো বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছে।

এই সফরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়, এনসিপি নেতাদের এই সফর ছিল রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও কৌশল নির্ধারণের অংশ যেখানে বিদেশি প্রভাবক জড়িত থাকতে পারে।

দলের ভেতর থেকেও সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই জানান, এই সফর সম্পর্কে দলের বেশিরভাগ নেতা কিছুই জানতেন না। চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে এনসিপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “সফরটি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত ও অবকাশ যাপনমূলক। পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিরোধীদের অপপ্রচার।”

এদিকে ৫ আগস্ট ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়েও দলটির ভেতরে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বর্ষপূর্তির দিনে আয়োজিত এক সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করায় কিছু নেতার ওপর অসন্তোষ তৈরি হয়। যারা অনুষ্ঠানে অংশ নেননি তারা মনে করেন ঘোষণাপত্রে শহীদ ও আহত কর্মীদের যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নেতাদের দর্শক সারিতে বসতে হয়েছিল যা অনেকের জন্য অপমানজনক মনে হয়েছে। তাই অনেকে ঢাকার বাইরে অবস্থান করে মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।

এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার আগমন নিয়ে সেখানকার বিএনপি নেতাকর্মীরা সি পার্ল হোটেলের সামনে জমায়েত হন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, "পিটার হাসের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি। আমরা শুধু বিশ্রাম নিতে এসেছি।"

হোটেল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে, ওই সময়ে পিটার হাস বা অন্য কোনো বিদেশি অতিথি হোটেলে অবস্থান করেননি।

তবে এ সফরকে কেন্দ্র করে এনসিপির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদ হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের লিখিত ব্যাখ্যা দিতে এবং ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, দলীয় অনুমতি ছাড়া এমন সফর শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলীয় ভাবমূর্তির পরিপন্থী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপির ভেতরে চলমান মতবিরোধ এবং নেতৃত্বে অসন্তোষ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালালেও দলীয় ঐক্যের অভাব তাদের অবস্থানকে দুর্বল করছে।

একজন বিশ্লেষকের ভাষায়, “নিজেদের মধ্যে ঐক্যহীনতা থাকলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ময়দানে টিকে থাকা কঠিন হবে। বর্তমানে দেশে একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।”

রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্ষপূর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে এমন বিতর্কিত সফর এনসিপির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে দলের জনপ্রিয়তা বাড়ার বদলে কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে কেউ কেউ আশা করছেন, এই সংকট সত্ত্বেও যদি এনসিপি নিজেদের ভেতরের মতবিরোধ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতিতে ফিরে আসে তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সবশেষে এই সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য অবকাশ যাপন নাকি রাজনৈতিক পুনর্গঠনের সূচনা তা সময়ই বলে দেবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত