ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
শেখ হাসিনার পতনের দিনে দিল্লিতে যা যা ঘটেছিল

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে মনসুন অধিবেশনের শেষ সপ্তাহ শুরু হয়েছিল। সময় ছিল কম অথচ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিল তখনো পাস করানো বাকি। ফলে মোদি সরকারের মন্ত্রিসভা ও ট্রেজারি বেঞ্চ ছিল তৎপরতায় ভরপুর।
তবে ওই দিন দিল্লির দৃষ্টি আটকে ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উত্তাল পরিস্থিতির দিকে। নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বিশ্বস্ত তিন সহচর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গভীর নজর রাখছিলেন প্রতিবেশী দেশের ঘটনাবলির ওপর।
ঢাকায় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষ রাজপথে নেমেছিল। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল শেখ হাসিনা সংকটে থাকলেও তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন। এমনকি ৪ আগস্ট মোদির সঙ্গে হাসিনার সর্বশেষ হটলাইন সংলাপে এমন কোন ইঙ্গিতই ছিল না যে পরদিনই সবকিছু পাল্টে যাবে।
দুপুরে টানা দুটো ফোনে নাটকীয় মোড়:
৫ আগস্ট দুপুরে দিল্লিতে আসে দুটি ফোন। প্রথমটি সরাসরি শেখ হাসিনার দপ্তর থেকে। কলে জানানো হয় তিনি পদত্যাগ করে ভারত আশ্রয়ের অনুমতি চাইছেন। দ্রুতই অনুমতি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় ফোনটি আসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে, হাসিনার সামরিক বিমানের ভারতের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণের জন্য। ভারত অনুমতি দেয় তবে একটি শর্তে তাকে ভারতীয় বিমান নয়, বাংলাদেশের সামরিক বিমানেই আসতে হবে।
ভারত চায়নি পরবর্তীতে অভিযোগ উঠুক যে তারা শেখ হাসিনাকে ‘উদ্ধার’ করেছে। ফলে বাংলাদেশের সি-১৩০ বিমানেই শেখ হাসিনার দিল্লি আগমন ঘটে।
দিল্লিতে আলোড়ন কিন্তু সংসদে নীরবতা:
দুপুর গড়িয়ে যেতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ফ্লাইটরাডারে নজর, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা, গণভবনের হেলিপ্যাডের একটি ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে। কিন্তু পার্লামেন্টে সরকার ছিল নীরব।
বিকেলে তৃণমূলের এমপি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি তুলতেই স্পিকার বলেন, “আগে নিজের দেশ নিয়ে ভাবুন।”
ততক্ষণে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বিরোধীদের অনুরোধ করা হয় যেন বাংলাদেশ ইস্যুতে এখনই চাপ না দেওয়া হয়। বিরোধীরা রাজি হয় এবং সরকার জানায় যে পরদিন সকালে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হবে।
৬ আগস্ট সকালে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভারত সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে। রাহুল গান্ধী জানতে চান ভারতের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। জয়শঙ্কর পরদিন বিকেলে সংসদে স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, শেখ হাসিনাকে মানবিক কারণে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ব্যর্থ:
প্রথমে ধারণা ছিল দিল্লি হাসিনার জন্য কেবল ট্রানজিট পয়েন্ট, তিনি হয়তো লন্ডন বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোনো দেশে চলে যাবেন। কিন্তু ব্রিটেন সোজাসুজি জানিয়ে দেয় এখনই তাকে গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
ফলে শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গীদের নিয়ে আসা সি-১৩০ বিমানটি ৬ আগস্ট সকালে খালি অবস্থায় ঢাকা ফিরে যায়। তখনো ভারত নিশ্চিত ছিল না এই আশ্রয় কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
অজিত ডোভালের ভূমিকায় ‘নতুন প্রণব মুখার্জি’ :
৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হিন্ডনে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তখন থেকেই শেখ হাসিনার থাকার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। অতীতে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যার পর হাসিনার দিল্লি নির্বাসনকালে কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জি যেভাবে ‘অভিভাবক’ ছিলেন এখন ঠিক সেই ভূমিকাতেই আছেন ডোভাল।
প্রথামাফিক শেখ হাসিনার জন্যও ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ‘ডিব্রিফিং সেশন’ করেছে তার কয়েকটিতে ডোভাল নিজে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানা গেছে।
তথ্য : বিবিসি বাংলা
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারতে ঢাবির দুই ছাত্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়, ক্ষোভ
- শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্র ও বহুজাতিক ১৫ কোম্পানি
- ১১'শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন
- ডিএনসিসির শিক্ষাবৃত্তি পাবে ২ হাজার শিক্ষার্থী
- স্কয়ার ফার্মার বাজার মূলধনে নতুন মাইলফলক
- শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৭ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৪ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- বিকালে আসছে ১০ কোম্পানির ইপিএস
- বিকালে আসছে ২১ কোম্পানির ইপিএস
- ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- নতুন সিনেট সদস্য হলেন ঢাবির ৫ অধ্যাপক
- শিবলী রুবাইয়াত ও শেখ শামসুদ্দিন শেয়ারবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ১২ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস