ঢাকা, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন

সরকার দেশের লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার অংশ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডকে (এপিএসসিএল) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে ডিএসই বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ডিএসইর চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। উল্লেখ্য, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন ২০১৯ সালে তাদের নতুন ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল (পূর্ব) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থায়নের জন্য বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল।
ডিএসই কর্মকর্তাদের মতে, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনার পর রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার প্রথম পদক্ষেপ। অধ্যাপক ইউনূস চলতি বছরের মে মাসে শীর্ষ শেয়ারবাজার কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ এবং সরকারি অংশীদারিত্ব থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ সাধারণত সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা ফাইল করা থেকে শুরু করে ট্রেডিং পর্যন্ত এক থেকে দুই বছর সময় নিতে পারে। তবে ডিএসই আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনকে কম সময়ে বাজারে আনতে চাইছে, কারণ এর অনেক আর্থিক নথি তাদের পূর্ববর্তী বন্ড ইস্যু করার সময়ই প্রস্তুত ছিল।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এর আগে পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যু করে তহবিল সংগ্রহ করেছিল। একটি বৈঠকে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশা করা যায়, তালিকাভুক্তির প্রস্তাবটি তাদের আসন্ন বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার একটি শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি রয়েছে এবং এটি প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে মুনাফা অর্জন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। কোম্পানিটি যাতে শেয়ারবাজারে সহজে তালিকাভুক্ত হতে পারে, সেজন্য ডিএসই সব ধরনের সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এর কাছে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ এবং বিক্রয় করে।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা ১৩৭ কোটি ২৬ লাখ শেয়ারে বিভক্ত। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ১২৪ কোটি ৯২ লাখ শেয়ার (৯১.০১০ শতাংশ) ধারণ করে এবং বিদ্যুৎ বিভাগ ১২ কোটি ৩১ লাখ শেয়ারের (৮.৯৮ শতাংশ) মালিক।
১৯৬৬ সালে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন (এপিএস) ১৯৭০ সালের জুলাই মাস নাগাদ দুটি ইউনিট চালু করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১২৮ মেগাওয়াট। স্বাধীনতার পর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালে অতিরিক্ত তিনটি করে ১৫০ মেগাওয়াট ইউনিট যুক্ত করা হয়। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দুটি ৫৬ মেগাওয়াটের গ্যাস টারবাইন এবং একটি ৩৪ মেগাওয়াটের স্টিম টারবাইন সহ একটি কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।
ক্রমাগত সম্প্রসারণের মাধ্যমে এপিএসের বর্তমানে মোট স্থাপিত ক্ষমতা ১ হাজার৬৯০ মেগাওয়াট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি জাতীয় গ্রিডে ৭ হাজার ৫৭১ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯.৩৯ শতাংশ বেশি।
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি রেকর্ড পরিমাণ ৪৮৯ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে, যার শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ৫৭ পয়সা। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে এর রাজস্ব ৩৩.৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ অর্থবছরে এর রাজস্ব ছিল ৩ হাজার৩৮০ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ছিল ২৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যার শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৭৮ পয়সা। মুনাফার এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধেও (৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত) অব্যাহত রয়েছে।
২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে এর নিট মুনাফা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা হয়েছে, যার শেয়ার প্রতি আয় ২ টাকা ৩৪ পয়সা। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের ২৬৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং ১ টাকা ৯৬ পয়সার তুলনায় বেশি। ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এর রাজস্ব কিছুটা বেড়ে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড-ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল ১৯ কোম্পানি
- বহুজাতিক কোম্পানির ‘এ’ ক্যাটাগরিতে প্রত্যাবর্তন
- এক কোম্পানির দাপটেই চাঙা শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজারের উত্থান কি টেকসই হবে? বিশ্লেষকরা যা বলছেন
- ডিভিডেন্ড-ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল ১২ কোম্পানি
- দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে ১৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ২২ জুলাই : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, এনসিপির সকল কার্যক্রম স্থগিত
- শেয়ারবাজারে চমক দেখাল দুই বহুজাতিক কোম্পানি
- সর্বোচ্চ চাহিদার শীর্ষে ৪ কোম্পানির শেয়ার
- বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বহুজাতিক তিন কোম্পানি
- চাহিদার তুঙ্গে ১০ কোম্পানির শেয়ার
- ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন নির্দেশনা
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা