ঢাকা, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষায় সফটওয়্যার স্থাপন, আরও সময় চায় ব্রোকাররা

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুলাই ০২ ০৫:৪৩:০৬
বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষায় সফটওয়্যার স্থাপন, আরও সময় চায় ব্রোকাররা

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ রোধে গুরুত্বপূর্ণ 'টেম্পার-প্রুফ ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার' স্থাপন করার জন্য আরও দুই মাস সময় চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। তৃতীয়বারের মতো বর্ধিত এই সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। সফটওয়্যারটি ডিজিটাল জালিয়াতি রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা গেছে।

ডিবিএ দাবি করেছে, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত সফটওয়্যার বিক্রেতারা জনবল সংকটে ভুগছেন, যে কারণে তারা সফটওয়্যার ইনস্টলেশন ও বাস্তবায়নে ব্রোকারদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে পারছেন না। ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, গত মাসের দীর্ঘ ঈদের ছুটি এবং অন্যান্য সরকারি ছুটি সফটওয়্যার কার্যক্রমের অগ্রগতি মন্থর করেছে।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট আরও উল্লেখ করেন, সব ব্রোকারেজ ফার্মগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অপরিবর্তনযোগ্য ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার ইনস্টল করার প্রাথমিক সময়সীমা ছিল গত বছরের এপ্রিল মাস। ডিএসই এবং ডিবিএ-এর অনুরোধে এটি তিনবার বাড়ানো হয়। বিএসইসি'র মুখপাত্র মো. আবুল কালাম নিশ্চিত করেছেন, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সময় বাড়ানোর আবেদন পেয়েছে এবং পরবর্তী কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ডিএসই কর্মকর্তাদের মতে, ৩০২টি টিআরইসি (ট্রেডিং রাইটস এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) ধারকদের মধ্যে ২৫৫টি ইতোমধ্যে লক্ষ্যভুক্ত ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার ইনস্টল করেছে, বাকিরা সফটওয়্যারটি চালু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বিএসইসি'র নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্রোকারেজ ফার্মগুলোকে সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর এর পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সময়ে সময়ে ব্রোকারেজ ফার্মগুলো পরিদর্শন করবে। যে সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তাদের স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে একটি সার্টিফিকেট নিতে হবে।

একটি স্টক ব্রোকারের ব্যাক অফিসে ক্লায়েন্টদের সম্পদ, লেনদেন, ক্যাশ ব্যালেন্স এবং জমা ব্যালেন্সের ডেটা সংরক্ষিত থাকে। ইন-হাউস ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় অনেক অসাধু ব্রোকার ট্রেড এবং লেনদেন সম্পর্কিত ডেটা ম্যানিপুলেট করে ক্লায়েন্টদের অজান্তেই অর্থ সরিয়ে ফেলত। তালিকাভুক্ত সফটওয়্যার বিক্রেতারা বিনিয়োগকারীদের অর্থ ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্টক ব্রোকারদের অভিন্ন পরিষেবা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বেশ কয়েকটি ফার্ম কর্তৃক তহবিল আত্মসাতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পেয়ে প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ সফটওয়্যার ইনস্টল করার জন্য নির্দেশিকা তৈরি করে। ব্রোকারদের দ্বারা ক্লায়েন্টদের তহবিল আত্মসাৎ এবং অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।

২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ব্যাংকো সিকিউরিটিজ এবং শাহ মোহাম্মদ সাগির অ্যান্ড কোম্পানি সম্মিলিতভাবে প্রায় ৩ বিলিয়ন টাকা আত্মসাৎ করেছিল, যা দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা। মশিহুর সিকিউরিটিজ কর্তৃক তহবিল ও শেয়ারের আত্মসাৎ গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত সর্বশেষ কেলেঙ্কারি। ব্রোকারেজ ফার্মগুলো অবৈধভাবে নকল ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবং তাদের বিনিয়োগের অবস্থা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করেছে। এছাড়া, আরও কিছু ব্রোকারেজ ফার্ম সম্বনিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে, যা ট্রেডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হতো।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির অভাবে এই আর্থিক অপরাধগুলো ঘটেছে। আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত