ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

অর্থপাচার ও অনিয়মে জড়িত আরএসআরএম, বিএসইসির তদন্ত শুরু

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ২৪ ০৬:৩৬:৩০
অর্থপাচার ও অনিয়মে জড়িত আরএসআরএম, বিএসইসির তদন্ত শুরু

শেয়ারবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলের (আরএসআরএম) ব্যবসায়িক কার্যক্রম দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি, বৈদ্যুতিক, তারল্য ও কাঁচামাল সংকটসহ বিভিন্ন জটিলতায় উৎপাদন পুনরায় চালু করা যাচ্ছে না।

তবে চট্টগ্রামভিত্তিক রতনপুর গ্রুপের সহযোগী এই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এর জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। গঠিত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে ১০টি নির্দেশনা দিয়ে তদন্ত কমিটির আদেশ জারি করা হয় এবং তদন্তের বিষয়টি আরএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শাহনোজ, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক ফারহানা ওয়ালেজা। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িক অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করবে। বিশেষ করে, ২০২২ সালের ৪ জুলাই কমিশনে দাখিল করা পূর্ববর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা; ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর থেকে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণ; কোম্পানির সামগ্রিক বর্তমান অবস্থা এবং ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন; প্রসপেক্টাস ও অনুমোদন অনুসারে আইপিও-এর ৩০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনিয়ম; ঋণ ও মূলধন ব্যবহারে অনিয়ম; কোম্পানির অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত মামলাগুলো যাচাই এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে রিপোর্ট; কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদ এবং অন্যান্যদের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিষয়াদী যাচাই-বাছাই করা হবে।

এছাড়াও ২০২১ সালের ৩০ জুন পরবর্তী কোনো আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি হয়ে থাকলে তার রাজস্ব আয়, বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস), নিট সম্পদ মূল্য, ইনভেন্টরি, অগ্রিম, আমানত, নগদ অর্থ, শেয়ার মূলধন, দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি দায়সহ অন্যান্য আর্থিক বিষয়গুলোর সত্যতা যাচাই করা হবে।

পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। আরএসআরএম ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং ২০২০ সালের শেষের দিক থেকে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর থেকে কোম্পানিটি আর উৎপাদনে ফিরতে পারেনি এবং গত পাঁচ বছর ধরে কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ বা লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটেও ২০২১ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির কোনো আর্থিক তথ্য নেই।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড প্রদান করেনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এর আগে ২০২০ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এর মোট পরিশোধিত মূলধন ১০১ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮টি। চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটি শেয়ার ধারনের তথ্য হালনাগাদ করেছে। সেখানে দেখা যায়,কোম্পানির উদ্যোক্তাদের কাছে ২৯.৯৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৪.০৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৫.৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত