ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শেয়ারবাজারে বাড়ছে হতাশা: শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ হাজার

দেশের শেয়ারবাজারে চলমান মন্দাবস্থা, অধিকাংশ কোম্পানির দরপতন এবং কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তীব্র হচ্ছে। এর ফলে নিজেদের পোর্টফোলিওতে থাকা সব শেয়ার বিক্রির প্রবণতাও বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শেয়ারশূন্য বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্টের (বিও হিসাব) সংখ্যা ৪৫ হাজার ৩৬৯টি বেড়েছে বলে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে।
শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ও বিনিয়োগকারীর প্রবণতা
সিডিবিএলের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি শেষে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৭টি। সর্বশেষ ৪ জুন শেষে এর পরিমাণ বেড়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৬টিতে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে শেয়ারধারী বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৪০ হাজার ৩৮১টি।
এর আগে ১ জানুয়ারি শেষে শেয়ারবাজারে শেয়ারধারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯টি, যা ৪ জুন শেষে ১২ লাখ ৩১ হাজার ১৬৮টিতে নেমে এসেছে। এই পরিসংখ্যান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আস্থাহীনতা এবং বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতাকে স্পষ্ট করে।
মোট বিও হিসাব ও লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ
তবে আশার কথা হলো, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমনের ইঙ্গিত দেয়। ১ জানুয়ারি শেষে মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৪টি, যা ৪ জুন শেষে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ের ব্যবধানে মোট বিও হিসাব বেড়েছে ২ হাজার ৭৬৩টি।
আলোচ্য সময়ে পুরুষ ও নারী উভয় বিও হিসাবধারীর সংখ্যাও বেড়েছে। ১ জানুয়ারি শেষে পুরুষ বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬১ হাজার ৩৫০টি, যা ৪ জুন শেষে ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৭টিতে দাঁড়িয়েছে (৬ হাজার ৫০৭টি বৃদ্ধি)। অন্যদিকে, নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ২৫৬টি বেড়ে ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৮৪টি থেকে ৪ লাখ ৪ হাজার ৪০টিতে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগকারী
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ১০৮টি, যা ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৩টি থেকে বেড়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫৫১টিতে দাঁড়িয়েছে। তবে, প্রবাসীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৩০৫টি, যা ৪৬ হাজার ৬৯১টি থেকে ৪৬ হাজার ৩৮৬টিতে নেমে এসেছে।
বাজার পর্যালোচনা ও বিশ্লেষকদের মত
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স নিম্নমুখী ছিল। বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২১৮ পয়েন্টে। সর্বশেষ ৪ জুন শেষে ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৭০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৫০৯ পয়েন্ট কমেছে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও ছিল হতাশাজনক। গত ছয় মাসে ডিএসইতে একদিনে সর্বোচ্চ ৬০৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, আর এ সময়ে সর্বনিম্ন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২৪ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে দেশের শেয়ারবাজারে চলমান মন্দা পরিস্থিতি, একের পর এক কোম্পানির দরপতন এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয় ও মুনাফা কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বাজেটে প্রণোদনা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
শেয়ারবাজারের চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারকে পুনরুজ্জীবিত করতে বেশ কিছু প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে। কর্পোরেট করের ব্যবধান বৃদ্ধি, সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে অগ্রিম আয়কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলির কর হার কমানোর মতো প্রস্তাবনাগুলো বাজারের প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন। এই পদক্ষেপগুলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারের গতিশীলতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রণোদনাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সহজ হবে এবং এটি সামগ্রিকভাবে বাজারের তারল্য ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। দীর্ঘমেয়াদে এই পদক্ষেপগুলো শেয়ারবাজারের ভিত্তি আরও মজবুত করবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল ও লাভজনক পরিবেশ তৈরি করবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ: এক কোম্পানির শেয়ার কিনলেন উদ্যোক্তারা
- শেয়ারবাজারে বিস্ময়: এক লাখ টাকার শেয়ার ৮০ কোটি!
- বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ করেছে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি
- বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দ্যুতি ছড়াচ্ছে ১৩ ‘বনেদি’ কোম্পানি
- মুনাফা থেকে লোকসানে তথ্য প্রযুক্তির দুই কোম্পানি
- শেয়ারবাজারের ১০ ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা
- বড় আন্দোলনে নামছে ৩ 'দল'
- সত্যিই কি স্ট্রোক করেছেন মির্জা ফখরুল? যা জানা গেল
- মুনাফা বেড়েছে বিবিধ খাতের ৬ কোম্পানির
- ডিভিডেন্ড বেড়েছে শেয়ারবাজারের সাত ব্যাংকের
- ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃ'ত্যু ৬
- ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে ওষুধ খাতের ১৩ কোম্পানির
- ডিভিডেন্ডের উপর উচ্চ কর: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
- ফেসবুক কমেন্টকে কেন্দ্র করে ঢাবি ছাত্রের আ-ত্ম-হ-ত্যা
- বস্ত্র খাতে মুনাফা বেড়েছে ২০ কোম্পানির