ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বব্যাপী

যুক্তরাষ্ট্র-চীন-সৌদির কারণে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ জুন ১০ ২৩:৩৬:৫৫
যুক্তরাষ্ট্র-চীন-সৌদির কারণে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনা ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত এবং সৌদি আরবের চীনে অপরিশোধিত তেল রপ্তানি সামান্য হ্রাস পাওয়ার পূর্বাভাসে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) বিজনেস রেকর্ডারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩৪ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭.৩৮ ডলারে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দামও ৩৩ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৬৫.৬২ ডলারে। এর আগের দিন ব্রেন্টের দাম ছিল ৬৭.১৯ ডলার, যা ২৮ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা বাজারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। লন্ডনে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনা চলতে থাকায় বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠেছে।'

অনিক্স ক্যাপিটাল গ্রুপের গবেষণা প্রধান হ্যারি টচিলিন গুরিয়ান বলেন, "বাণিজ্য আলোচনাগুলো ঘিরে আশার একটি বাতাস বইছে। বাজার এখন এর ফলাফলের অপেক্ষায় এবং এই প্রত্যাশাই তেলের দাম বাড়াতে সহায়তা করছে।"

গোল্ডম্যান স্যাকস-এর বিশ্লেষকদের মতে, "যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনার ইতিবাচক গতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের সদর্থক প্রতিবেদন বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ হ্রাস করেছে।"

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (০৯ জুন) জানান, "তিনি তার লন্ডনে অবস্থানরত দলের কাছ থেকে ‘শুধু ভালো খবর’ পাচ্ছেন এবং আলোচনার অগ্রগতি তাকে সন্তুষ্ট করছে।"

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনা যদি একটি চুক্তিতে উপনীত হয়, তবে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আশাবাদের বার্তা দেবে। এর প্রভাব পড়বে পণ্যের চাহিদায়, বিশেষ করে জ্বালানি তেলে।

এদিকে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো জানিয়েছে, তারা জুলাই মাসে চীনে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করবে, যা জুন মাসের তুলনায় ১০ লাখ ব্যারেল কম। এই হ্রাস পাওয়ার তথ্য ওপেক প্লাস জোটের ঘোষিত উৎপাদন বৃদ্ধির বিপরীতে সরবরাহে একটি ভারসাম্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

হ্যারি টচিলিনগুরিয়ান বলেন, "সৌদি আরব যেহেতু সবচেয়ে বেশি উৎপাদনে সক্ষম, সেখান থেকেও তেমন বাড়তি সরবরাহ না থাকায় বোঝা যাচ্ছে ওপেক প্লাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা বাস্তবে খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না।"

উল্লেখ্য, ওপেক প্লাস জোট—যারা বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে—জুলাই মাসে দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। এটি টানা চতুর্থ মাসের মতো উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। তবে মে মাসে এই উৎপাদন বাড়লেও তা ছিল সীমিত পরিসরে।

রয়টার্সের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, অতিরিক্ত উৎপাদনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইরাক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম তেল উত্তোলন করেছে। পাশাপাশি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অনুমোদিত সীমার চেয়ে তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে উৎপাদন বাড়িয়েছে।

এদিকে, পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রস্তাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে ইরান পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদি ইরান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায় তাহলে তারা তেল রপ্তানি বাড়াতে পারবে যা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে তেলের বাজার এক জটিল ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনা, ওপেকের উৎপাদন কৌশল এবং ইরান পরিস্থিতির সমন্বয়ে সামনে তেলের দামে বড় ধরনের ওঠানামার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত