ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

শেয়ারবাজারের ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করতে রোডম্যাপ ঘোষণা

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ০৫ ১০:৩৬:৩৭
শেয়ারবাজারের ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করতে রোডম্যাপ ঘোষণা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি শক্তিশালী ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু করে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই একীভূতকরণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এই সাড়ে তিন মাস সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি বিশেষ টিম ব্যাংকগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে বিভিন্ন তথ্য যাচাই করবে। এই টিমগুলোতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকেও যোগ্য লোক নিয়োগ করা হবে।

একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো— সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকও আলোচনায় ছিল, তবে বিদেশি মালিকানা থাকায় এটিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (০৪ জুন) গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এই ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে একীভূতকরণের সাড়ে তিন মাসের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছেন। এই বৈঠকেই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের বিষয়টি জানানো হয় এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য হলো আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে 'ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫' অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে।

প্রথম ধাপ শেষে ব্যাংকগুলোকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই ব্যাংকগুলোর এমডিদের চুক্তি বাতিল হবে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বাছাই করা সদস্যসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নতুন পর্ষদ গঠন করা হবে, যাদের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ব্যাংকগুলো পরিচালিত হবে।

তবে জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে যদি কোনো ব্যাংক সরকার থেকে নেওয়া বিশেষ ধারের টাকা ফেরত দিয়ে নিজেরা চলতে পারে, তবে তারা একীভূতকরণ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের (একিউআর) জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিটর নিয়োগ দেয়, যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, সমস্যাগ্রস্ত এই পাঁচটি ব্যাংকের মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যেখানে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮.২০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বৈঠকে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি ব্যাংক মিলে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গঠন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য। মালিক পক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চরম দুরবস্থায় পড়লেও এসব ব্যাংকের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আশার দিক হিসেবে তুলে ধরা হয়। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। এই কারণে কোনো ব্যাংক থেকে কাউকে ছাঁটাইয়ের দরকার হবে না। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ পাওয়াদের নতুন করে যোগ্যতা যাচাই করা হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য ঋণ আদায় জোরদার করা হবে এবং সরকার থেকে কয়েক ধাপে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হবে। এছাড়াও, একই এলাকায় একাধিক শাখা থাকলে তা অন্য জায়গায় স্থানান্তর এবং কিছু শাখা বন্ধ করা হবে।

ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান সমকালকে বলেন, "পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে শক্তিশালী একটি ইসলামী ব্যাংক করা হবে। আমানতকারীর সুরক্ষা দেওয়া এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংক খাতের জন্য যা ইতিবাচক।"

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রত্যেক আমানতকারীর অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিলেও অধ্যাদেশের আলোকে আগামী ১৫ অক্টোবরের পর প্রথমে এসব ব্যাংকের শেয়ার শূন্য করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে। এ সময়ে প্রতিটি ব্যাংকের খারাপ সম্পদ ও ভালো সম্পদ আলাদা করা হবে এবং ভালো সম্পদ এক ছাতার নিচে এনে ব্রিজ ব্যাংকের অধীনে দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত