ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসের পদত্যাগ: প্রবাসীদের রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

২০২৫ মে ২৪ ১৪:৩২:১৭
ড. ইউনূসের পদত্যাগ: প্রবাসীদের রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

ডুয়া ডেস্ক: দেশে গত বছর জুলাই মাসে পতিত আ’লীগের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন বড় প্রভাব ফেলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স শাটডাউন কর্মসূচি। আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে রেমিট্যান্স না পাঠানোর ক্যাম্পেইন চালান প্রবাসীরা।

হাসিনা সরকারের পতনের পর নিত্য-নতুন রেকর্ড তৈরি হয় রেমিট্যান্স প্রবাহে। তবে সম্প্রতি দেশে চলমান অস্থিরতায় ড. ইউনূস সরকারের পদত্যাগের গুঞ্জনে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে। ইউনূস সরকার পদত্যাগ করলে আবারও রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন প্রবাসীরা।

স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে প্রবাসেও। আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বেশ কয়েকটি রাস্তায় বিক্ষোভ করেন দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীরা। দেশটিতে বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ হওয়ায় ৫৭ বাংলাদেশিকে কারাদণ্ড দেয় দেশটির সরকার। অভিযুক্তদের অন্তত তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর ও একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তৎকালীন আ’লীগ সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করায় তাদের মুক্ত করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসিনা। তবে হাসিনা সরকার পতনের পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাদের মুক্ত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ড. ইউনূসের অনুরোধে খুব দ্রুত মুক্তি পান দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসীরা। যার ফলে প্রবাসীদের মধ্যে ড. ইউনূসের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।

এছাড়াও ইউনূস সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত নভেম্বর মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রী এবং তাদের স্বজনদের জন্য ওয়েটিং লাউঞ্জ চালু করেন ড. ইউনূস। ওয়েটিং লাউঞ্জ উদ্বোধন করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজারবাইজান যাবার পথে প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে একটি লাউঞ্জ উদ্বোধন করে গিয়েছিলাম। এ লাউঞ্জটা প্রবাসীদের জন্য ডেডিকেটেড, যাতে তাদের পথে পথে ঘুরতে না হয়।

সম্প্রতি দেশের রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। যদিও জামায়াত-সহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক পক্ষই বলছে, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান না।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক বৈঠকের আহ্বান জানান জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। তবে ড. ইউনূস স্বেচ্ছায় চলে যেতে চাইলে জাতি বিকল্প জনগণ বেছে নেবে।

তবে চলমান পরিস্থিতিতে যদি ড. ইউনূস পদত্যাগ করেন তাহলে আবারও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা। তারা বলছেন দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্কার কাজে ড. ইউনূসের কোনো বিকল্প নেই। ড. ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন তাহলে প্রবাসীরা আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন গ্রুপে রেমিট্যান্স শাটডাউনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন তারা।

দুবাই প্রবাসী আনাম মাহমুদ একটি গ্রুপে লিখেছেন– ডঃ মোহাম্মদ ইউনূস যদি অভিমান নিয়ে পদত্যাগ করে চলে যান, তাহলে আমরা যারা দেশপ্রেমিক রেমিট্যান্স যোদ্ধা আছি আমরাও আরেকবার রেমিট্যান্স শাটডাউন করে দেখিয়ে দেব চোরের দলগুলোকে, ইনশাআল্লাহ। জোনায়েদ আহমেদ নামে আরেক প্রবাসী লিখেছেন– ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করলে আমরা প্রবাসীরা একযোগে রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা করবো।

এছাড়াও কয়েকজন প্রবাসীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে অধিকাংশই বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অস্ট্রেলিয়ার আরেক মাহাদী বলেন, ড. ইউনূস তিনি একজন নোবেল বিজয়ী, সারা বিশ্বেই তার খ্যাতি রয়েছে। তিনি তার সব সামর্থ্য দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি কমাতে কাজ করছেন। অথচ অনেক রাজনৈতিক দল তাকে সহযোগিতা করছে না। নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে। আমরা চাচ্ছি তিনি আরও কিছু সময় দিন। এর পরে ফ্রি-ফেয়ার একটা নির্বাচন তার হাত ধরেই হোক। তাকে যদি এভাবে চলে যেতে হয় তবে আমরা প্রবাসীরা আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবো।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফাহাদ হক বলেন, ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে অনেক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার মাধ্যমেই ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। দেশের জন্য তাকে আরও সময় দেওয়া খুব প্রয়োজন। আমরা প্রবাসীরা বিশ্বাস করি তার মাধ্যমে অর্থনীতি আরও সচল হবে। আমরা প্রবাসীরা সবাই ইউনূসের পক্ষে। তিনি যদি এই মুহূর্তে পদত্যাগ করেন তবে আবারও রেমিট্যান্সে ধস নামবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে কোনো কারণে রেমিট্যান্সের গতি কমে গেলে রিজার্ভে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে। এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন– আমাদের মতো দেশগুলোতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ব্লাডের মতো চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। এই মুহূর্তে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করলে রিজার্ভে অনেক বড় ধাক্কা আসবে। যা দেশের অর্থনীতিতে অনেক ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। এই মুহূর্তে দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে