ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দু:সংবাদ

২০২৫ মে ১৩ ১৯:৩৪:২৪
যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দু:সংবাদ

ডুয়া নিউজ: যুক্তরাজ্য সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। সোমবার (১২ মে) প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ঘোষিত নতুন নিয়মে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথমবারের মতো ৬ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষে মাত্র ১৮ মাস যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ থাকবে—যা আগে ছিল দুই বছর।

নতুন নিয়মে নন-ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্ভূত) শিক্ষার্থীদের বার্ষিক টিউশন ফি হবে ২০ থেকে ৪১ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত। এ ছাড়া স্নাতক ডিগ্রির পর দক্ষ চাকরি না পেলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হবে। যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।

বিশ্ববিদ্যালয় খাতের জন্য বড় চাপ

বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ইউনিভার্সিটিজ ইউকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতির মুখে পড়বে।

ইউনিভার্সিটিজ ইউ কে-এর প্রধান নির্বাহী ভিভিয়েন স্টার্ন বলেন, “ভেটেরিনারি মেডিসিনের মতো কোর্সে প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড। এর অর্ধেক আসে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আয় থেকে। এখন এই আয়ের উৎস সংকুচিত হলে ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমূল্যের কোর্সগুলো চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”

রাসেল গ্রুপের উদ্বেগ

যুক্তরাজ্যের ২৪টি শীর্ষস্থানীয় পাবলিক রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন রাসেল গ্রুপ জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তাদের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২ লাখ ৫৭ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল। এদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়ের এক পঞ্চমাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পৌঁছায়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফি থেকেই যে অতিরিক্ত তহবিল সংগৃহীত হয়, তা দিয়ে প্রতিজন ব্রিটিশ শিক্ষার্থীর কোর্সে যে গড় ২,৫০০ পাউন্ড ঘাটতি ছিল, তার অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হয়।

সরকারের পক্ষের যুক্তি

সরকার জানিয়েছে, নতুন কর ও নিয়মের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ উচ্চশিক্ষা খাতে পুনর্বিনিয়োগ করা হবে। এর লক্ষ্য হলো—ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে উৎসাহ দেওয়া এবং দেশীয় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। কারণ এখন পর্যন্ত যে শূন্যস্থান অভিবাসী শ্রমিক দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে তা পূরণ করতে হবে দেশীয় কর্মীদের দিয়েই।

শিক্ষাখাতের উদ্বেগ বাড়ছে

বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফি, গবেষণা খাতে অপর্যাপ্ত তহবিল, এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন কমে যাওয়া—সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খাত এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ভিভিয়েন স্টার্ন আরও বলেন, "এই মুহূর্তে বড় ধরনের কর আরোপ কোনোভাবেই সহায়ক নয়। বরং সরকার চাইলে একটি গঠনমূলক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা করতে পারে, যাতে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ আরও সংকটে না পড়ে।"

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর



রে