ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

বৈঠকের পরও স্থির হয়নি বাজার, বিনিয়োগকারীদের হতাশা

২০২৫ মে ১৩ ১৫:৫৯:৫৪
বৈঠকের পরও স্থির হয়নি বাজার, বিনিয়োগকারীদের হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের শেয়ারবাজারে ফের বড় ধরনের পতন ঘটেছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে; তবে বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। মঙ্গলবার (১৩ মে) দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) উভয় বাজারেই সূচক বড় পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ করে।

বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার ছুটির দিনে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।

প্রত্যাশা থেকে হতাশায়

বৈঠককে ঘিরে বাজারে এক ধরনের আশা তৈরি হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, বাজারে তারল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত আসবে। এরই প্রেক্ষিতে বৈঠকের আগের কর্মদিবস (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

কিন্তু বৈঠকে কোনো বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ বা প্রণোদনার ঘোষণা না আসায় বিনিয়োগকারীদের আশা দ্রুতই হতাশায় পরিণত হয়। বরং পূর্ববর্তী কিছু আদর্শগত বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছে মাত্র। এরই জেরে সোমবার সূচক ফের নেতিবাচক ধারায় ফিরে যায়, আর মঙ্গলবার বাজারে নামে বড় ধরনের পতন।

সূচকের চিত্র

মঙ্গলবার (১৩ মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৬.৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪,৮৭৪.৫৮ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২.১৯ পয়েন্ট কমে ১,০৬৩.৩৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৬.৭৬ পয়েন্ট কমে নেমে আসে ১,৭৯৮.৩৭ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৩৬৪ কোটি ৯ লাখ টাকার তুলনায় কম। লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ৩০৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৫টি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও একই চিত্র দেখা যায়। সিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার চেয়ে কিছুটা বেশি। লেনদেন হওয়া ২০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬.৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৩,৬৮৬ পয়েন্টে। আগের দিন সূচকটি বেড়েছিল ১৯.১৫ পয়েন্ট।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ

মতিঝিলের একটি ব্রোকারেজ হাউজে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একজন বিনিয়োগকারী বলেন, “বৈঠক হলো, বক্তৃতা হলো, কিন্তু কাজে কী এলো? আমাদের পুঁজি তো দিন দিন গলছে।”

একজন মধ্যবয়সী বিনিয়োগকারী বলেন, “বাজার নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু আজ বুঝলাম সেটা ছিল মরীচিকা মাত্র।”

আবদুর রহমান নামে এক তরুণ বলেন, “রাশেদ মাকসুদ শেয়ারবাজারটাকে শেষ করে দিয়েছেন। অর্থ উপদেষ্টা কেন তাঁকে ধরে রেখেছেন, তা বোধগম্য নয়। যদি তিনি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হন, তাহলে তাঁকে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠানো হোক।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজার এখন একধরনের দিকহীনতায় ভুগছে। বৈঠক থেকে বাস্তব কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়েছেন। কেউ নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না, আবার অনেকেই পুরোনো শেয়ার নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। বর্তমান কমিশন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে