ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

আজ হাসিনার মৃ'ত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করবে প্রসিকিউশন

২০২৫ ডিসেম্বর ১৫ ১২:১৪:১৯

আজ হাসিনার মৃ'ত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করবে প্রসিকিউশন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই গণহত্যা সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাজা বাড়াতে আজ আপিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন। এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করে আজ আপিল দায়ের করা হবে। আপিল জমা দেওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্রিফিং করা হবে।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বরই প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার সাজা বৃদ্ধি করে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল। সেদিন গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একটি অভিযোগে তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অপর একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে আপিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যেই করা হচ্ছে।

এর আগে ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশে থাকা তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের নয় দিন পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়, ফলে আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে আসামিদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

এ মামলায় প্রসিকিউশন তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনলেও ট্রাইব্যুনাল-১ রায়ে দুটি অভিযোগের আওতায় ছয়টি ঘটনার বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রথম অভিযোগে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে ফোনালাপে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে ফাঁসিতে ঝোলানোর হুমকি ও নির্দেশ দেওয়া এবং এসব বক্তব্যের পর অধীনস্তদের কোনোভাবে বাধা না দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসবের ফলশ্রুতিতে রংপুরে আন্দোলনকারী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগেও তিনটি ঘটনা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপ উল্লেখযোগ্য। ওই কথোপকথনে ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শনাক্ত করা এবং হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এসব নির্দেশ বাস্তবায়নে অধীনস্তদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

এর পরিণতিতে একই বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার চানখারপুল এলাকায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং সাভারের আশুলিয়ায় আরও ছয়জনকে হত্যার পর তাদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে উভয় অভিযোগেই সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত