ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

জলবায়ু অর্থায়নে জনগণ ও স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান

২০২৫ ডিসেম্বর ১০ ১৪:০৯:৩৪

জলবায়ু অর্থায়নে জনগণ ও স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু অর্থায়ন সংস্কারে স্থানীয় জনগণের চাহিদা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং স্বচ্ছতা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। দ্রুত তহবিল বিতরণ, সঠিক পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী রক্ষায় সক্ষম তহবিল কাঠামো এখন অতি জরুরি।

বুধবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের জাতীয় জলবায়ু অর্থায়ন কৌশল প্রণয়ন’ শীর্ষক পরামর্শ কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি মূলত নতুন ও অতিরিক্ত সহায়তার নীতির ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সেই প্রতিশ্রুতি অনেক ক্ষেত্রে শিথিল হয়েছে। জলবায়ু সংকটে দায়ী কিছু উন্নত দেশ এখনো বৈজ্ঞানিক সত্য অস্বীকার করে, যা জলবায়ু অর্থায়নকে জটিল এবং অন্যায্য করে তোলে। তিনি উল্লেখ করেন, কয়েকটি দেশ প্রতিশ্রুতি পালন করলেও অনেকে জলবায়ু আলোচনাকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে।

দেশীয় পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিবছর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সর্বনিম্ন বাজেট বরাদ্দ পায়, অথচ বড় অবকাঠামো প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অভিযোজন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় পর্যায়ের স্থিতিস্থাপকতার জন্য যথেষ্ট অর্থায়ন হয় না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কার্যকর জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

উপদেষ্টা আরও বলেন, শুধু অর্থ বিতরণই যথেষ্ট নয়; সংস্থাগুলোর পরিকল্পনাগত দক্ষতা, কর্মী সক্ষমতা এবং দ্রুত বাস্তবায়ন ব্যবস্থা থাকতে হবে। সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়াতেও দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই প্রক্রিয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দিলে ফলাফল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ন্যায্য বরাদ্দের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, নদীভাঙন এলাকা, লবণাক্ত অঞ্চল এবং খরাপ্রবণ এলাকায় শত শত আবেদন আসে, কিন্তু কম সংখ্যক আবেদনই সমর্থন পায়। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী রক্ষায় বিনিয়োগ অর্থনৈতিকভাবে নতুন সড়ক নির্মাণের তুলনায় বেশি ফলপ্রসূ। অপ্রাসঙ্গিক খাতে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খরচকে জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে দেখানো হলে দায়বদ্ধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হয়।

পরে মানবাধিকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘সবার জন্য ন্যায়বিচার ও অধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের অঙ্গীকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে এখন নবগঠিত পুলিশ কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যা আগে ছিল না। সঠিক ব্যক্তি নেতৃত্ব দিলে এটি একটি বড় অর্জন হবে।

অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিভাগ সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত