ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় থাকবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০২৫ নভেম্বর ২২ ১৬:১৬:৫৯

বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় থাকবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের এই সময় বাংলাদেশ একটি সক্রিয় ও দায়িত্বশীল সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “পুনর্গঠনের সময় অনেক রাষ্ট্র পক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী হয়, কিন্তু আমাদের উচিত প্রথমে সঠিক পথ বেছে নেওয়া।” তিনি আরও বলেন, পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশ নেবে এবং জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ একটি সক্রিয়, সার্বভৌম ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে চায়। আমরা দৃঢ়ভাবে অংশ নেব, প্রয়োজন হলে স্পষ্টভাবে বলব এবং সবসময় জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর রেখে কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলব।”

ক্ষমতার পরিবর্তনশীল কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে দৃশ্যমান ফল আসতে হবে। বঙ্গোপসাগর এখন কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এবং বাংলাদেশ নিছক করিডর হিসেবে নয়, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভূমিকা রাখতে চায়।

উপদেষ্টা ইউক্রেন, গাজা, সুদান ও মিয়ানমারের অস্থিরতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, সংকট মোকাবিলায় বিদ্যমান কাঠামো ব্যর্থ হয়েছে। তাই বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী হতে হবে, যাতে বাস্তব ফলাফল পাওয়া যায়।

তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মানবিক দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার স্পষ্ট হয়েছে।

তথ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ভুয়া তথ্য, ডিপফেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর প্রভাব কূটনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ তথ্যক্ষেত্রকে সুরক্ষিত রাখতে চায় এবং এমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তুলতে চায় যা নিরাপত্তা ও অধিকার দুটোই রক্ষা করবে।

অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা, নিষেধাজ্ঞা ও ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল বাংলাদেশকে বহুমুখী হতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে বাধ্য করছে। বঙ্গোপসাগরের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পারস্পরিক সুযোগ ও স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে যোগাযোগ ও অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

জলবায়ুজনিত ঝুঁকির প্রসঙ্গ তুলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি উপকূলীয় দেশগুলোকে সহযোগিতামূলক কাঠামো গড়ে তোলা, প্রযুক্তি ভাগাভাগি করা এবং জলবায়ু সহনশীল নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কৌশল প্রণয়নের আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা সিজিএসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য এই প্ল্যাটফর্ম অপরিহার্য। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন। এবারের ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন, পুনর্গঠন’।

সম্মেলনে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আঞ্চলিক বাস্তবতা, জোট ও অংশীদারিত্বের পরিবর্তন, তথ্যযুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক চাপ ও অভিবাসন—আজকের বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করা বিষয়গুলো আলোচনায় থাকবে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত