ঢাকা, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২

যেসব কারণে পিছিয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান

ইনজামামুল হক পার্থ
ইনজামামুল হক পার্থ

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ২১:২৮:৩৮

যেসব কারণে পিছিয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান

ইনজামামুল হক পার্থ: বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশীয় প্রবাসী ও ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, কঠোর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পাসপোর্টের মর্যাদাকে প্রভাবিত করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সমন্বিত কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছাড়া এই অবনতির ধারাবাহিকতা রোধ করা সম্ভব নয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স ২০২৫ সালের হেনলি পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশ ১০৬ দেশের মধ্যে ১০০তম অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের পাসপোর্ট বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম। একই অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, আর যুদ্ধপীড়িত ফিলিস্তিন রয়েছে ৯৯তম স্থানে। বর্তমানে বাংলাদেশিরা মাত্র ৩৮টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করতে পারছেন। তবে ভ্রমণকারীরা অভিযোগ করছেন, তথাকথিত ভিসামুক্ত দেশগুলোতেও প্রবেশে বাড়ছে জিজ্ঞাসাবাদ এবং বাধা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা, মানবপাচার ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এ অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। ভারত বাংলাদেশে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভিসা সেবা স্থগিত করে, যদিও পরে সীমিত পরিসরে চিকিৎসা ও শিক্ষার্থী ভিসা চালু করা হয়। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে।

ফলে ভিসা পাওয়ার সময় বেড়েছে, বাতিলের হার বেড়েছে এবং বৈধ ভিসা থাকলেও ইমিগ্রেশনে সমস্যা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা পাসপোর্ট সংকট আরও জটিল করেছে। ২০২৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান ১৮০ অনিবন্ধিত বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ১৮৭ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে। এছাড়া ইতালি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস, সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় কয়েক ডজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবণতা আন্তর্জাতিক আস্থা কমিয়েছে। মার্কিন ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন্স রিপোর্ট ২০২৫’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সার্বিকভাবে টায়ার-২ স্থরে রয়েছে। গত এক বছরে ৩,৪১০ জন মানুষ পাচারের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৭৬৫ জন যৌন পাচার, ২,৫৭২ জন জোরপূর্বক শ্রম, এবং ৭৩ জন অন্যান্য ধরনের।

আইনশৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দেশেও অবনতি ঘটিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অন্তত ১৭৯ জন মব হামলায় নিহত হয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা হ্রাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা, মানবপাচার ও অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার অবস্থা প্রভাব ফেলছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করা, ভিসা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা শক্তিশালী করা। পাশাপাশি, প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও মানবপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ফেরানো সম্ভব হবে।

এছাড়াও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিদেশে অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে এবং জালিয়াতি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনার কারণে একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে, যা বাংলাদেশের পাসপোর্টের র‍্যাংকিংয়ে পতনের অন্যতম কারণ।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত