ঢাকা, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

ঐক্যই উম্মাহর শক্তি: ইসলাম বিভেদের নয়, ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়

২০২৫ অক্টোবর ২২ ২০:৩৩:৪২

ঐক্যই উম্মাহর শক্তি: ইসলাম বিভেদের নয়, ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়

নিজস্ব প্রতিবেদক :ইসলাম কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম নয়; এটি এক মহা ঐক্যের বার্তা, যা মানুষের হৃদয়, সমাজ ও জাতিকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায়। রাসুল (সা.) জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দেখিয়েছেন—উম্মাহর স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি হলো ঐক্য, বিভেদ নয়।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এক ব্যক্তিকে কোরআনের একটি আয়াত ভিন্নভাবে তিলাওয়াত করতে দেখেছিলেন। যেহেতু তিনি নবী (সা.)-কে অন্যভাবে পাঠ করতে শুনেছেন, তাই তিনি সেই ব্যক্তিকে নবীর কাছে নিয়ে যান। নবীজি উভয়ের পাঠ শুনে বলেন, “তোমরা দুজনেই ঠিক পড়েছ।” এরপর সতর্ক করেন, “তর্কে জড়িও না; পূর্ববর্তী প্রজন্ম তর্কে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়েছিল।” (বুখারি, হাদিস: ২৪১০) এটি ইসলামের শিক্ষা দেয় যে, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় বিভেদ নয়; অহংকার ও তর্কবিতর্কই বিভেদের মূল।

ইসলামের ঐক্য কেবল রাজনৈতিক চুক্তি নয়, এটি ঈমানের শিকড়ের মধ্যে নিহিত। আল্লাহ বলেন, “তোমরা সবাই আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।” (আলে ইমরান, ১০৩) কোরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করলে বর্ণ, ভাষা বা জাতিগত পার্থক্যও ঐক্য ভাঙতে পারে না। কিন্তু দলীয় স্বার্থ বা নেতার অনুসরণের কারণে ঐক্যহীনতা দেখা দেয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনগণ এক দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ কষ্ট পেলে, পুরো দেহ জ্বরে আক্রান্ত হয়।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৬) এটি শুধু আবেগ নয়, সামাজিক বাস্তবতার নীতি। মুসলিমরা যেখানেই থাকুক, হৃদয়, দুঃখ, আনন্দ ও আশা একীভূত হওয়া উচিত।

ইসলাম মতভেদকে স্বাভাবিক মানবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে গ্রহণ করে, তবে ঘৃণা ও দলবাজির নামে বিভেদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইমাম শাফেঈ (রহ.) বলেছেন, “আমার মতও ভুল হতে পারে, অন্যের মতও সঠিক হতে পারে।” [শাওকানী, ইরশাদুল ফুহুল, পৃষ্ঠা-২৫৩] অন্যের প্রতি তাচ্ছিল্য বা নিজের মতকে একমাত্র সত্য মনে করা বিভাজনের কারণ। আল্লাহ বলেন, “তোমরা তাদের মতো হবে না যারা বিভক্ত হয়েছিল।” (আলে ইমরান, ১০৫)

ইতিহাস প্রমাণ করে, মুসলিমরা যখন ঐক্যবদ্ধ ছিল, তখন তারা জ্ঞানের আলোকবর্তিকা ও ন্যায়বিচারের পথপ্রদর্শক। বিপরীতে, বিভেদের কারণে আন্দালুসিয়ার পতন, বাগদাদের ধ্বংস ও ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের পতন ঘটে। বাহ্যিক শত্রু নয়, অভ্যন্তরীণ কলহ ছিল মূল কারণ।

আজকের বাস্তবতায় নামাজে একত্র হলেও হৃদয়ের কাতার ভেঙে যায়। গোষ্ঠী, মাজহাব, রাজনীতি ও ভাষার কারণে বিভাজন সৃষ্টি হয়। কেউ নিজেকে ‘শুদ্ধতম’ মনে করে অন্যকে ‘বিদআতি’ বা ‘অশুদ্ধ’ বলে ফতোয়া দেয়। অথচ কোরআন আমাদের পরিচয় দিয়েছে একটাই—“নিশ্চয়ই তোমাদের উম্মাহ এক উম্মাহ।” (আল-আম্বিয়া, ৯২)

ঐক্য পুনরুদ্ধার করা আজকের সময়ের প্রধান দায়িত্ব। মুসলমানরা একে অপরের শত্রু নয়, বরং একই দেহের অঙ্গ। ইবনে মাসউদ (রা.)-এর হাদিস শেখায়, ভিন্নতা নয়, অহংকার ও তর্কই ধ্বংসের মূল। মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু হৃদয় যেন এক থাকে; বিতর্ক নয়, সংলাপ হোক; বিভাজন নয়, ভ্রাতৃত্ব হোক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুসলমান মুসলমানের ভাই; সে তার ওপর জুলুম করে না, অবজ্ঞা করে না, পরিত্যাগও করে না।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)

অতএব, ঐক্য কেবল সমাজের প্রয়োজন নয়, এটি ঈমানের দাবি। ঐক্যই উম্মাহকে শক্তিশালী করবে, নতুন শক্তি দেবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ খুলে দেবে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

ঢাকা কাস্টমসের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল

ঢাকা কাস্টমসের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা কাস্টমস... বিস্তারিত