ঢাকা, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণে বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ

২০২৫ অক্টোবর ০৮ ২১:৪৪:৫৬

পাঁচ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণে বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ

মোবারক হোসেন: ইসলামী ধারার পাঁচ দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পথে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে এবং নতুন ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

তবে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান পাঁচ ব্যাংকের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশীদারিত্ব না থাকার বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুযায়ী কোনো ব্যাংক অবসায়ন বা একীভূত হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিপূরণের আওতায় আসেন না। তিনি বলেন, “নতুন ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, কিন্তু পুরোনো ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো শেয়ার থাকবে না। নতুন ব্যাংকের শেয়ার সম্পূর্ণ নতুনভাবে ইস্যু করা হবে।”

অন্যদিকে, বিএসইসির একজন অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, “যদি কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার বাতিল বা বাজেয়াপ্ত করা হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই কিছু ক্ষতিপূরণ বা বিকল্প অংশ দিতে হবে। তা না হলে এটি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”

তিনি আরও বলেন, “যেসব পরিচালক বা উদ্যোক্তা ব্যাংকের অর্থ লোপাট করেছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে, কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারী তো কোনো অপরাধ করেননি। তাদের শেয়ার কেন বাতিল হবে?”

এই কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগকারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিএসইসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি দিয়েছে, যেখানে একজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের আইনি অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) এবং এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ও এসআইবিএল একীভূতকরণে আপত্তি জানিয়েছে। ব্যাংকদুটি মনে করছে, সময় পেলে তারা নিজস্বভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

ডিএসই তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৫৩.১১% প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার এবং ৩১.৪৬% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৬৫.৪% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার, এক্সিম ব্যাংকে ৩৯.২৮% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার, এসআইবিএলে ১৭.৯২% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩০.৯৩% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “নতুন ব্যাংক যেহেতু সরকারের মালিকানায় থাকবে, তাই আমানত নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। মার্জার নতুন কনসেপ্ট, তাই অনেকে ক্ষুব্ধ হতে পারেন, কেউ কেউ আইনি পদক্ষেপও নেবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর বিধান ও প্রচলিত আইন মেনেই এটি সম্পন্ন করবে।”

সূত্র জানায়, একীভূতকরণের পর নতুন ব্যাংকের নাম হতে পারে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, দায় ও জনবল একত্র করে এটি অধিগ্রহণ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বড় অংশের মূলধন দেওয়া হবে, এবং পরিচালনা পর্ষদে সরকারি প্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ ব্যাংকাররা থাকবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা মার্জার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। অনুমোদনের পরই বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত