ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২
প্রথমবারের মতো গাজায় গণহত্যা স্বীকারে জাতিসংঘ, অভিযুক্ত ইসরাইল

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে ইসরাইল জাতিসংঘ এবার প্রথমবারের মতো এ সত্য স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত সংস্থার স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের ৭২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান নাভি পিল্লাই জানান, গাজায় গণহত্যার দায় সরাসরি ইসরাইলের। তিনি বলেন, গণহত্যা কনভেনশনে বর্ণিত মানদণ্ড অনুযায়ী ইসরাইল সেখানে গণহত্যার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনে সংজ্ঞায়িত পাঁচটি কর্মকাণ্ডের মধ্যে চারটি ইসরাইল করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—
১) একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা
২) গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করা
৩) পরিকল্পিতভাবে ওই গোষ্ঠীকে ধ্বংসের পরিস্থিতি তৈরি করা
৪) জন্ম রোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করা
এ অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে বেসামরিক নাগরিক হত্যাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তবে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে একে ভুয়া ও হামাসের প্রচারণা বলে দাবি করেছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, কমিশনের তিন সদস্য হামাসের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন এবং বহুবার খণ্ডিত তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন, ইসরাইল আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে এবং অর্থনীতিকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। অন্যদিকে, বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ মন্তব্য করেছেন, “বিচ্ছিন্ন হওয়া ইসরাইলের ভাগ্য নয়, এটি নেতানিয়াহুর ব্যর্থ নীতির ফল।
এই সমালোচনার মধ্যেই গাজায় আবারও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজায় একটি তীব্র সামরিক অভিযান চলছে, যা ইসরাইলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়। ইতোমধ্যেই গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দক্ষিণ দিকে পালিয়েছে। কিন্তু নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে আল-মাওয়াসি শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। সেখানে নেই পর্যাপ্ত পানি, স্যানিটেশন বা মৌলিক পরিষেবা।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, হামলার কারণে হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া সতর্ক করেছেন, অকাল জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে।
এদিকে, খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স জানিয়েছে, ইসরাইলি অবরোধের কারণে খাদ্যের অভাবে মঙ্গলবার আরও দুই শিশু মারা গেছে। ফলে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৫ জনে। একইসঙ্গে ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, গাজা শহরে স্থল আক্রমণ শিশুদের দুর্ভোগ বহুগুণ বাড়াবে। বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু আহত, ক্লান্ত ও দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে।
ঘটনার পর জার্মানি গাজায় ইসরাইলের স্থল আক্রমণকে সম্পূর্ণ ভুল আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা অ্যাকশনএইডের সিইও হান্না বন্ড জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাজ্যকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা অবিলম্বে ইসরাইলি অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে। তার মতে, না হলে যুক্তরাজ্য এ অপরাধে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি নেবে।
একইসঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, গাজায় চলমান গণহত্যা প্রতিরোধ ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে অবিলম্বে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সরকারের সিদ্ধান্তে ডুবছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন?
- ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড কার্যকারিতায় বিএসইসির নতুন উদ্যোগ
- শেয়ার কারসাজিতে ৫ বিনিয়োগকারীকে ১৩ কোটি টাকা জরিমানা
- শেয়ারবাজারে প্রতারণা ঠেকাতে মাঠে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা
- একাদশে ভর্তি: চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ
- শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক মুনাফা চান? জেনে নিন ৫ মন্ত্র
- আরএসআই বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত পাঁচ শেয়ারে
- মালিকানায় পরিবর্তন আসছে ইয়াকিন পলিমারের
- এক শেয়ারের জোরেই সবুজে ফিরল শেয়ারবাজার
- শেয়ার কারসাজিতে শ্যালক–দুলাভাইর দেড় কোটি টাকা জরিমানা
- শেয়ারবাজারে প্রসারিত হচ্ছে টেকসই বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত
- ধস কাটিয়ে অবশেষে শেয়ারবাজারে উত্থানের স্রোত
- রেকর্ড ডেটে শেয়ার লেনদেন চালুর পরিকল্পনা ডিএসইর
- উৎপাদন বাড়াতে নতুন যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ করছে দুই কোম্পানি
- স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে এডিএন টেলিকমের নতুন পদক্ষেপ