ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

১০২ বছরে ৩৭ নির্বাচন: এক ঝলকে ডাকসুর গৌরবময় ইতিহাস

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ২৩:১৯:২৬

১০২ বছরে ৩৭ নির্বাচন: এক ঝলকে ডাকসুর গৌরবময় ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১০২ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। ২০১৯ সালে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আবারো চলতি বছর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এরশাদবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে ডাকসুর নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যে কারণে এটিকে বাংলাদেশের 'দ্বিতীয় সংসদ' হিসেবে অভিহিত করা হয়।

১৯২২-২৩ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠিত হয়। প্রত্যেক হল থেকে তিনজন ছাত্র এবং একজন শিক্ষক, আর উপাচার্যের মনোনীত একজন শিক্ষক—এদের নিয়ে ছাত্র সংসদ গঠিত হতো। শিক্ষকরা একজন সভাপতি হতেন। স্বাধীনতার পর থেকে সরকারগুলোর অনীহার কারণে ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হয়নি। ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৯টি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের পর ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালের পর ১৯৯১, ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৬ এবং ২০০৫ সালেও ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরোধিতার কারণে নির্বাচনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদল বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করলেও তা সফল হয়নি। ২০১২ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি জানালেও তা জোরালো হয়নি।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে নুরুল হক নুর ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে পরাজিত করেন। নুর ১১ হাজার ৬২টি ভোট পেয়েছিলেন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছিলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে ডাকসুর শীর্ষ পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৯৭২ সালে ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (ভিপি) ও মাহবুবুর জামান (জিএস), ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে মাহমুদুর রহমান মান্না (ভিপি), ১৯৮২ সালে আখতারুজ্জামান (ভিপি) এবং জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু (জিএস), ১৯৮৯ সালে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ (ভিপি) ও মুশতাক আহমেদ (জিএস), এবং ১৯৯০ সালে ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান (ভিপি) ও খায়রুল কবির খোকন (জিএস) উল্লেখযোগ্য। মজার বিষয় হলো, স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা ডাকসুর শীর্ষ পদে জয়ী হতে পারেননি, বরাবরই বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

২০১৯ সালের পর চলতি বছর আবারও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ডাকসু নির্বাচন সবার আগে হচ্ছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যার মধ্যে ৬২ জন নারী প্রার্থী। ভিপি পদে ৪৫ জন, জিএস পদে ১৯ জন, এবং অন্যান্য পদেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী রয়েছেন।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্যান্য সংবাদ