ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্কে ভারতীয় রপ্তানি ঝুঁকির মুখে, বিকল্প কি?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ১১:৩৮:৩১

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্কে ভারতীয় রপ্তানি ঝুঁকির মুখে, বিকল্প কি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কের বাস্তবায়নের ফলে ভারতীয় রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্কে ভারতীয় পণ্য ও চাকরির বাজার চাপের মুখে। দিল্লি এখনও কূটনৈতিক কৌশলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং সরাসরি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের প্রক্রিয়া এবং তিয়ানজিনে নিরাপত্তা সম্মেলনের আড়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে। একই সময়ে দেশে রপ্তানিকারকদের জন্য কর ছাড় ও সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে শুল্কের প্রভাব কিছুটা কমানো যায়।

তবে বাস্তবতা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য অচলাবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে দীর্ঘায়িত, আলোচনাও বন্ধ। মার্কিন কর্মকর্তাদের তিরস্কারের ফলে সম্পর্ক আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক ভারতের জিডিপি প্রায় ০.৮ শতাংশ হ্রাস করতে পারে। চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৩৫ বিলিয়ন ডলারের কমতে পারে, যা টেক্সটাইল, গয়না ও চামড়াজাত শিল্পের লাখো চাকরি ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করা সম্ভব হলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক। ২০১৯ সালে ভারত ২৮টি মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিল। কার্নেগি এনডাওমেন্টের অধ্যাপক অ্যাশলি টেলিস মনে করেন, “প্রতিশোধ ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতই বেশি নির্ভরশীল।” যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের কাছে রপ্তানির তিনগুণ।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, জাপান, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা এবং নতুন বাজার খোঁজা উচিত, তবে সরাসরি প্রতিশোধ এখন ঠিক সময় নয়। তিনি আরও সতর্ক করেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ বাড়লে চাপ শুধু পণ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সেবা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও আউটসোর্সিং-এও প্রভাব পড়তে পারে, যা ভারতের জিডিপির ৬ শতাংশে প্রভাব ফেলতে পারে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ইতোমধ্যেই এইচ-১বি ভিসার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর ৭০ শতাংশ ব্যবহার করেন ভারতীয়রা। তাই রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনাটাই ভারতের জন্য প্রধান সমাধান। সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু মনে করেন, মেক্সিকো, কানাডা, চীন, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে।

দিল্লি ইতোমধ্যে নতুন চুক্তির পথে এগোচ্ছে। জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ইইউ’র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে নতুন বাজারে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত অভিযোজন সহজ নয়। শ্রীবিদ্যা জানধ্যালা বলেন, অনিশ্চিত শুল্ক পরিস্থিতিতে নতুন গ্রাহক তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে ভারতের বিকল্প নেই। সরকারকে বাজার বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে, বিভিন্ন খাতভিত্তিক বাণিজ্য মিশন পাঠাতে হবে, ইউএই ও মেক্সিকোতে রপ্তানি কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ও মানোন্নয়নে সহায়তা দিতে হবে, না হলে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বাজার দখল করতে পারে।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত