ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল

২০২৫ আগস্ট ২১ ১৮:০৫:৪০

শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, শেয়ার ব্যবসায় সাফল্য এবং লাভবান হওয়ার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করা অপরিহার্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই কৌশলগুলো রাতারাতি বা স্বল্প মেয়াদে সব সময় কাঙ্ক্ষিত ফল নাও দিতে পারে। বরং, ধৈর্য, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ও সঠিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব। নিচে এমন দশটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

১. শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও)

পিই রেশিও ২০ এর কম হলে বিনিয়োগকে নিরাপদ ধরা হয়। মূল্য-আয় অনুপাত নির্দেশ করে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। পিই কম হলে ঝুঁকি কম, আর পিই বেশি হলে ঝুঁকি বেশি। সাধারণত ২০-এর কম পিই রেশিও নিরাপদ, আর ৪০-এর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। বিনিয়োগের পূর্বে এই দিকটি খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি)

শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য বা এনএভি বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য থাকা উচিত। কোম্পানি অবসায়ন না হলে শেয়ারহোল্ডারের জন্য সম্পদের প্রভাব সীমিত। তবে কোম্পানি বিলুপ্ত হলে সম্পদের অবশিষ্টাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আগে ঋণ এবং অন্যান্য দায় পরিশোধ করা হয়।

৩. শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস)

ইপিএস যত বেশি, শেয়ার বিনিয়োগের উপযোগিতা তত বেশি। বেশি ইপিএস হলে কোম্পানি উচ্চ ডিভিডেন্ড দেয়ার সক্ষমতা রাখে। ইপিএস কম থাকলে ডিভিডেন্ডও কম হয়। শেয়ার বেছে নেওয়ার সময় ইপিএস এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ রিটার্ন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা জরুরি।

৪. শেয়ারের সংখ্যা

শেয়ারের সংখ্যা বা ফ্লোটিং শেয়ার বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কম ফ্লোটিং শেয়ার থাকলে দর বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। লেনদেনযোগ্য শেয়ার বেশি থাকলে বাজারে সহজলভ্য থাকে। নিয়মিত লেনদেন হয় এমন শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীকে জরুরী ভিত্তিতে লিকুইডিটি প্রদান করে।

৫. অনুমোদিত মূলধন ও পরিশোধিত মূলধন অনুপাত

যদি অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন কাছাকাছি থাকে, তবে বোনাস বা রাইট শেয়ার ইস্যু করা কঠিন হয়। এটি বিশেষ করে সেই বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা ডিভিডেন্ড বা বোনাস শেয়ার লক্ষ্য করে বিনিয়োগ করেন।

৬. ডিভিডেন্ড ইল্ড (ডিভিডেন্ড ইল্ড)

ডিভিডেন্ড ইল্ড শেয়ারের প্রকৃত রিটার্ন নির্দেশ করে। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রাপ্য ডিভিডেন্ডের শতাংশ হিসাব করে ইল্ড নির্ধারণ করা হয়। ডিভিডেন্ড ইল্ড বেশি হলে বিনিয়োগকারীর প্রাপ্তিও বেশি হয়। এটি বাজার মূল্যের ওঠানামার তুলনায় বাস্তবিক রিটার্ন বোঝায়।

৭. ডিভিডেন্ড ট্র্যাক রেকর্ড

গত ৩-৪ বছরের ডিভিডেন্ড প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করুন। বার্ষিক গড় ডিভিডেন্ডের কাছাকাছি দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করলে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া সম্ভব। ডিভিডেন্ডের ধারাবাহিকতা শেয়ার মূল্য ও বাজার বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

৮. মুনাফার ট্র্যাক রেকর্ড

কোম্পানির ৩-৪ বছরের মুনাফার তথ্য পর্যবেক্ষণ করুন। বছরভিত্তিক মুনাফার ওঠানামা বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং ভবিষ্যৎ রিটার্নের পূর্বাভাস দেয়। স্থিতিশীল মুনাফা সাধারণত শেয়ার মূল্যের স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করে।

৯. শেয়ারে অংশগ্রহণ

উদ্যোক্তা, পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার অংশগ্রহণ দেখুন। অংশগ্রহণের পরিবর্তন শেয়ার মূল্যে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উদ্যোক্তাদের বিক্রয় বেশি হলে দর কমতে পারে।

১০. কোম্পানির গুড উইল

শেয়ার কেনার আগে কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি এর সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কেবল মুনাফার ওপর নির্ভর করে না, বরং এর উদ্যোক্তাদের দূরদর্শিতা, দক্ষতা এবং আন্তরিকতা ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। একটি কোম্পানির সুনাম, মুনাফা, ডিভিডেন্ড দেওয়ার ধারাবাহিকতা এবং বাজারের আস্থা—এ সবই সরাসরি এর 'গুড উইল'-এর সঙ্গে জড়িত।

শেয়ার ব্যবসায় প্রকৃত লাভ নিশ্চিত করতে হলে কেনার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া জরুরি। কারণ কেবল বিক্রির সময় নয়, বরং কেনার মুহূর্তেই বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়। সঠিক তথ্য বিশ্লেষণ, বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং মৌলিক বিনিয়োগ কৌশল মেনে চললে দীর্ঘ মেয়াদে আপনার বিনিয়োগ থেকে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত